পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
আত্মশক্তি।

বীর, কেহ বা ভোগে বীর, কেহ বা ধর্ম্মে বীর, কেহ বা কর্ম্মে বীর। বর্ত্তমানে আমাদের ভারতবর্ষীয় প্রতিভাকে আমরা পূর্ণ উৎকর্ষের দিকে লইয়া যাইতে পারিতেছি না, তাহার কতকগুলি কারণ আছে—কিন্তু সর্ব্বপ্রধান কারণ বীর্য্যের অভাব। এই বীর্য্যের দারিদ্র্যবশত যদি নিজের প্রকৃতিকেই ব্যর্থ করিয়া থাকি, তবে বিদেশের অনুকৃতিকে সংগত করিয়া তুলিব কিসের জোরে?

 আমাদের আমবাগানে আজকাল আম ফলে না, বিলাতের আপেলবাগানে প্রচুর আপেল ফলিয়া থাকে। আমরা কি তাই বলিয়া মনে করিব যে, আমগাছগুলা কাটিয়া ফেলিয়া আপেলগাছ রোপন করিলে তবেই আমরা আশানুরূপ ফললাভ করিব? এই কথা নিশ্চয় জানিতে হইবে, আপেলগাছে যে বেশি ফল ফলিতেছে, তাহার কারণ তাহার গোড়ায়, তাহার মাটিতে সার আছে—আমাদের আমবাগানের জমির সার বহুকাল হইল নিঃশেষিত হইয়া গেছে। আপেল পাই না, ইহাই আমাদের মূল দুর্ভাগ্য নহে; মাটিতে সার নাই, ইহাই আক্ষেপের বিষয়। সেই সার যদি যথেষ্ট পরিমাণে থাকিত, তবে আপেল ফলিত না, কিন্তু আম প্রচুর পরিমাণে ফলিত এবং তখন সেই আম্রের সফলতায় আপেলের অভাব লইয়া বিলাপ করিবার কথা আমাদের মনেই হইত না। তখন দেশের আম বেচিয়া অনায়াসে বিদেশের আপেল হাটে কিনিতে পারিতাম, ভিক্ষার ঝুলি সম্বল, করিয়া একরাত্রে পরের প্রসাদে বড়লোক হইবার দুরাশা মনের মধ্যে বহন করিতে হইত না।

 আসল কথা, দেশের মাটিতে সার ফেলিতে হইবে। সেই সার আর কিছুই নহে—“কিল বিদুবীরতাং সারমেকং”—বীরতাকেই একমাত্র সার বলিয়া জানিবে। ঋষিরা বলিয়াছেন—“নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ”—এই যে আত্মা, ইনি বলহীনের দ্বারা লভ্য নহেন।