পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেশীয় রাজ্য।
১৬৩

বিশ্বাত্মা, পরমাত্মার কথা ছাড়িয়া দেওয়া যাক্— যে ব্যক্তি দুর্ব্বল, সে নিজের আত্মাকে পায় না—নিজের আত্মাকে যে ব্যক্তি সম্পুর্ণ উপলব্ধি না করিয়াছে, সে অপর কিছুতেই লাভ করিতে পারে না। য়ুরোপ নিজের আত্মাকে যে পথ দিয়া লাভ করিতেছে, সে পথ আমাদের সম্মুখে নাই; কিন্তু যে মূল দিয়া লাভ করিতেছে, তাহা আমাদের পক্ষেও অত্যাবশ্যক—তাহা বল, তাহা বীর্য্য। য়ুরোপ যে কর্ম্মের দ্বারা যে অবস্থার মধ্যে আত্মাকে উপলব্ধি করিতেছে, আমরা সে কর্ম্মের দ্বারা সে অবস্থার মধ্যে আত্মাকে উপলব্ধি করিব না— আমাদের সম্মুখে অন্য পথ, আমাদের চতুর্দ্দিকে অন্যরূপ পরিবেষ, আমাদের অতীতের ইতিহাস অন্যরূপ, আমাদের শক্তির মূলসঞ্চয় অন্যত্র—কিন্তু আমাদের সেই বীর্য্য আবশ্যক, যাহা থাকিলে পথকে ব্যবহার করিতে পারিব, পরিবেষকে অনুকূল করিতে পারিব, অতীতের ইতিহাসকে, বর্ত্তমানে সফল করিতে পারিব, এবং শক্তির গূঢ়সঞ্চয়কে আবিষ্কৃত-উদ্ঘাটিত করিয়া তাহার অধিকারী হইতে পারিব। “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ” —আত্মা ত আছেই, কিন্তু বল নাই বলিয়া তাহাকে লাভ করিতে পারি না। ত্যাগ করিতে শক্তি নাই, দুঃখ পাইতে সাহস নাই লক্ষ্য অনুসরণ করিতে নিষ্ঠা নাই;—কৃশ সঙ্কল্পের দৌর্ব্বল্য, ক্ষীণশক্তির আত্মবঞ্চনা, সুখবিলাসের ভীরুতা, লোকলজ্জা, লোকভয় আমাদিগকে মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে যথার্থভাবে আত্মপরিচয়, আত্মলাভ, আত্মপ্রতিষ্ঠা হইতে দুরে রাখিতেছে। সেইজন্যই ভিক্ষুকের মত আমরা অপরের মাহাত্ম্যের প্রতি ঈর্ষা করিতেছি এবং মনে করিতেছি, বাহ্য অবস্থা যদি দৈবক্রমে অন্যের মত হয়, তবেই আমাদের সকল অভাব, সকল লজ্জা দূর হইতে পারে!

 বিদেশের ইতিহাস যদি আমরা ভাল করিয়া পড়িয়া দেখি, তবে দেখিতে পাইব, মহত্ত্ব কত বিচিত্র প্রকারের—গ্রীসের মহত্ত্ব এবং রোমের