পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
আত্মশক্তি।

বিদ্যালয়ের সহিত তুলনীয় নহে বলিয়া শিক্ষাবিভাগে দেশীয় লোকের কর্ততৃত্ব খর্ব্ব করিয়া রাজা যদি নিজের জোরে কেম্ব্রিজ-অক্সফোর্ডের নকল প্রতিমা গড়িয়া তোলেন, তবে তাহাতে আমাদের কতটুকুই বা শ্রেয় আছে—আমরা গরীবের যোগ্য বিদ্যালয় যদি নিজে গড়িয়া তুলিতে পারি, তবে সেই আমাদের সম্পদ। যে ভাল আমার আয়ত্ত ভাল নহে, সে ভালকে আমার মনে করাই মানুষের পক্ষে বিষদ বিপদ্। অল্পদিন হইল, একজন বাঙালি ডেপুটিম্যাজিষ্ট্রেট্ দেশীয় রাজ্যশাসনের প্রতি নিতান্ত অবজ্ঞাপ্রকাশ করিতেছিলেন—তখন স্পষ্টই দেখিতে পাইলাম, তিনি মনে করিতেছেন, ব্রিটিশরাজ্যের সুব্যবস্থা সমস্তই যেন তাঁহাদেরই সুব্যবস্থা;—তিনি যে ভারবাহিমাত্র, তিনি যে যন্ত্রী নহেন; যন্ত্রের একটা সামান্য অঙ্গমাত্র, এ কথা যদি তাঁহার মনে থাকিত, তবে দেশীয় রাজ্যব্যবস্থার প্রতি এমন স্পর্দ্ধার সহিত অবজ্ঞাপ্রকাশ করিতে পারিতেন না। ব্রিটিশরাজ্যে আমরা যাহা পাইতেছি, তাহা যে আমাদের নহে, এই সত্যটি ঠিকমত বুঝিয়া উঠা আমাদের পক্ষে কঠিন হইয়াছে, এই কারণেই আমরা রাজার নিকট হইতে ক্রমাগতই নূতন নূতন অধিকার প্রার্থনা করিতেছি এবং ভুলিয়া যাইতেছি,—অধিকার পাওয়া এবং অধিকারী হওয়া একই কথা নহে।

 দেশীয় রাজ্যের ভুলত্রুটি-মন্দগতির মধ্যেও আমাদের সান্ত্বনার বিষয় এই যে, তাহাতে যেটুকু লাভ আছে, তাহা বস্তুতই আমাদের নিজের লাভ। তাহা পরের স্কন্ধে চড়িবার লাভ নহে, তাহা নিজের পায়ে চলিবার লাভ। এই কারণেই আমাদের বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্র ত্রিপুররাজ্যের প্রতি উৎসুকদৃষ্টি না মেলিয়া আমি থাকিতে পারি না। এই কারণেই এখানকার রাজ্যব্যবস্থার মধ্যে যে সকল অভাব ও বিঘ্ন দেখিতে পাই, তাহাকে আমাদের সমস্ত বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য বলিয়া জ্ঞান করি। এই কারণে, এখানকার রাজ্যশাসনের মধ্যে যদি কোনো অসম্পূর্ণতা