পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
আত্মশক্তি।

স্থলপদ্মে আরোপ করা হয়। কিন্তু দেশীয় রাজ্য স্বভাবের অব্যাহত নিয়মে দেশ উন্নতিলাভের উপায় নির্দ্ধারণ করিবে, ইহাই আমাদের কামনা।

 ইহার কারণ এ নয় যে, ভারতের সভ্যতাই সকল সভ্যতার শ্রেষ্ঠ। য়ুরোপের সভ্যতা মানবজাতিকে যে সম্পত্তি দিতেছে, তাহা যে মহামূল্য, এ সম্বন্ধে সন্দেহপ্রকাশ করা ধৃষ্টতা।

 অতএব য়ুরোপীয় সভ্যতাকে নিকৃষ্ট বলিয়া বর্জ্জন করিতে হইবে, এ কথা আমার বক্তব্য নহে—তাহা আমাদের পক্ষে অস্বাভাবিক বলিয়াই, অসাধ্য বলিয়াই স্বদেশী আদর্শের প্রতি আমাদের মন দিতে হইবে —উভয় আদর্শের তুলনা করিয়া বিবাদ করিতে আমার প্রবৃত্তি নাই তবে এ কথা বলিতেই হইবে যে, উভয় আদর্শই মানবের পক্ষে অত্যাবশ্যক।

 সেদিন এখানকার কোনো ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন যে, গবর্মেণ্ট-আর্টস্কুলের গ্যালারি হইতে বিলাতি ছবি বিক্রয় করিয়া ফেলা কি ভাল হইয়াছে?

 আমি তাহাতে উত্তর করিয়াছিলাম যে, ভালই হইয়াছে। তাহার কারণ এ নয় যে, বিলাতী চিত্রকলা উৎকৃষ্ট সামগ্রী নহে। কিন্তু সেই চিত্রকলাকে এত সস্তায় আয়ত্ত করা চলে না। আমাদের দেশে সেই চিত্রকলার যথার্থ আদর্শ পাইব কোথায়? দুটো লক্ষ্ণৌঠুংরি ও “হিলিমিলি পনিয়া” শুনিয়া যদি কোনো বিলাতবাসী ইংরেজ ভারতীয় সঙ্গীতবিদ্যা আয়ত্ত করিতে ইচ্ছা করে, তবে বন্ধুর কর্ত্তব্য তাহাকে নিরস্ত করা। বিলাতী বাজারের কতকগুলি সুলভ আবর্জ্জনা এবং সেই সঙ্গে দুটিএকটী ভাল ছবি চোখের সামনে রাখিয়া আমরা চিত্রবিদ্যার যথার্থ আদর্শ কেমন করিয়া পাইব? এই উপায়ে আমরা যেটুকু শিখি, তাহা যে কত নিকৃষ্ট, তাহাও ঠিকমত বুঝিবার উপায় আমাদের দেশে নাই।