পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেশীয় রাজ্য।
১৭১

লইয়া ঘরের মধ্যে পুঞ্জীভূত করিয়া তুলি— তাহাদের সম্বন্ধে বিচার করা আমাদের সাধ্যায়ত্ত নহে।

 এই আস্‌বাবের দোকান যদি লর্ড কার্জন বলপূর্ব্বক বন্ধ করিয়া দিতে পারিতেন, তবে দায়ে পড়িয়া আমরা স্বদেশী সামগ্রীর মর্য্যাদা রক্ষা করিতে বাধ্য হইতাম— তাহা হইলে টাকার সাহায্যে জিনিষক্রয়ের চর্চ্চা বন্ধ হইয়া রুচির চর্চ্চা হইত। তাহা হইলে ধনিগৃহে প্রবেশ করিয়া দোকানের পরিচয় পাইতাম না, গৃহস্থের নিজের শিল্পজ্ঞানের পরিচয় পাইতাম। ইহা আমাদের পক্ষে যথার্থ শিক্ষা, যথার্থ লাভের বিষয় হইত। এরূপ হইলে আমাদের অন্তরে-বাহিরে, আমাদের স্থাপত্যে-ভাস্কর্য্যে, আমাদের গৃহভিত্তিতে, আমাদের পণ্যবীথিকায় আমরা স্বদেশকে উপলব্ধি করিতাম।

 দুর্ভাগ্যক্রমে সকল দেশেরই ইতরসম্প্রদায় অশিক্ষিত। সাধারণ ইংরেজের শিল্পজ্ঞান নাই—সুতরাং তাহারা স্বদেশী সংস্কারের দ্বারা অন্ধ। তাহারা আমাদের কাছে তাহাদেরই অনুকরণ প্রত্যাশা করে। আমাদের বসিবার ঘরে তাহাদের দোকানের সামগ্রী দেখিলে তবেই আরাম বোধ করে,—তবেই মনে করে, আমরা তাহাদেরই ফরমায়েসে তৈরি সভ্যপদার্থ হইয়া উঠিয়াছি। তাহাদেরই অশিক্ষিত রুচি অনুসারে আমাদের দেশের প্রাচীন শিল্পসৌন্দর্য্য সুলভ ও ইতর অনুকরণকে পথ ছাড়িয়া দিতেছে। এদেশের শিল্পীরা বিদেশী টাকার লোভে বিদেশী রীতির-অদ্ভূত নকল করিতে প্রবৃত্ত হইয়া চোখের মাথা খাইতে বসিয়াছে।

 যেমন শিল্পে, তেম্‌নি সকল বিষয়েই। আমরা বিদেশী প্রণালীকেই একমাত্র প্রণালী বলিয়া বুঝিতেছি। কেবল বাহিরের সামগ্রীতে নহে, আমাদের মনে, এমন কি, হৃদয়ে নকলের বিষবীজ প্রবেশ করিতেছে। দেশের পক্ষে এমন বিপদ্ আর হইতেই পারে না।