পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
আত্মশক্তি।

“ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর,
পর কৈনু আপন, আপন কৈনু পর।”

এইজন্য কবিকথিত “স্রোতের সেঁওলি”র মত ভাসিয়াই চলিয়াছি।

 কিন্তু বাঙালির চিত্ত ঘরের মুখ লইয়াছে,—নানা দিক্ হইতে তাহার প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে। কেবল যে স্বদেশের শাস্ত্র আমাদের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিতেছে এবং স্বদেশী ভাষা স্বদেশী সাহিত্যের দ্বারা অলঙ্কৃত হইয়া উঠিতেছে, তাহা নহে, স্বদেশের শিল্পদ্রব্য আমাদের কাছে আদর পাইতেছে, স্বদেশের ইতিহাস আমাদের গবেষণাবৃত্তিকে জাগ্রত করিতেছে, রাজদ্বারে ভিক্ষাযাত্রার জন্য যে পাথের সংগ্রহ করিয়াছিলাম, তাহা প্রত্যহই একটু একটু করিয়া আনাদিগকে গৃহদ্বারে পৌঁছাইয়া দিবারই সহায়তা করিতেছে।

 এমন অবস্থার দেশের কাজ প্রকৃতভাবে আরম্ভ হইয়াছে বলিতে হইবে। এখন কতকগুলি অদ্ভুত অসঙ্গতি আমাদের চোখে ঠেকিবে এবং তাহা সংশোধন করিয়া লইতে হইবে। প্রোভিন্‌শ্যাল কন্ফারেন্স্‍ই তাহার একটি উৎকট দৃষ্টান্ত। এ কন‍্ফারেন্স্ দেশকে মন্ত্রণা দিবার জন্য সমবেত, অথচ হার ভাষা বিদেশী। আমরা ইংরাজিশিক্ষিতকেই আমাদের নিকটের লোক বলিয়া জানি—আপামরসাধারণকে আমাদের সঙ্গে অন্তরে অন্তরে এক করিতে না পারিলে যে আমরা কেহই নহি, এ কথা কিছুতেই আমাদের মনে হয় না। সাধারণের সঙ্গে আমরা একটা দুর্ভেদ্য পার্থক্য তৈরি করিয়া তুলিতেছি। বরাবর তাহাদিগকে আমাদের সমস্ত আলাপ-আলোচনার বাহিরে খাড়া করিয়া রাখিয়াছি। আমরা গোড়াগুড়ি বিলাতের হৃদয়হরণের জন্য ছলবলকৌশল-সাজসরঞ্জামের বাকি কিছুই রাখি নাই— কিন্তু দেশের হৃদয় যে তদপেক্ষা মহামূল্য এবং তাহার জন্যও যে বহুতর সাধনার আবশ্যক, এ কথা আমরা মনেও করি নাই।