পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বদেশী সমাজ।
৪৩

অনুকূলভাবেও গ্রহণ করেন, তথাপি ইহা অবাধে কার্য্যে পরিণত হইতে পারিবে না। এমন কি প্রস্তাবকারীর অযোগ্যতা ও অন্যান্য বহুবিধ প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক দোষ, ত্রুটি ও স্খলন সম্বন্ধে অনেক স্পষ্ট স্পষ্ট কথা এবং অনেক অস্পষ্ট আভাস আজ হইতে প্রচার হইতে থাকা আশ্চর্য্য নহে। আমার বিনীত নিবেদন এই যে, আমাকে আপনারা ক্ষমা করিবেন। অদ্যকার সভামধ্যে আমি আত্মপ্রচার করিতে আসি নাই, এ কথা বলিলেও পাছে অহঙ্কার প্রকাশ করা হয়, এজন্য আমি কুণ্ঠিত আছি। আমি অন্য যাহা বলিতেছি, আমার সমস্ত দেশ আমাকে তাহা বলাইতে উদ্যত করিয়াছে। তাঁহা আমার কথা নহে—তাহা আমার সৃষ্টি নহে, তাহা আমাকর্তৃক উচ্চারিতমাত্র। আপনারা এ শঙ্কামাত্র করিবেন না, আমি আমার অধিকার ও যোগ্যতার সীমা বিস্মৃত হইয়া স্বদেশীসমাজগঠনকার্য্যে নিজেকে অত্যুগ্রভাবে খাড়া করিয়া তুলিব। আমি কেবল এইটুকুমাত্র বলিব—আসুন্, আমরা মনকে প্রস্তুত করি,—ক্ষুদ্র দলাদলি, কুতর্ক, পরনিন্দা, সংশয় ও অতিবুদ্ধি হইতে হৃদয়কে সম্পূর্ণভাবে ক্ষালন করিয়া অদ্য মাতৃভূমির বিশেষ প্রয়োজনের দিনে, জননীর বিশেষ আহ্বানের দিনে চিত্তকে উদার করিয়া, কর্ম্মের প্রতি অনুকূল করিয়া, সর্ব্বপ্রকার লক্ষ্যবিহীন অতিসূক্ষ্ম যুক্তিবাদের ভণ্ডুলতাকে সবেগে আবর্জ্জনাস্তপের মধ্যে নিক্ষেপ করিয়া, এবং নিগূঢ় আত্মাভিমানকে তাহার শতসহস্র-রক্ততৃষার্ত্ত শিকড় সমেত হৃদয়ের অন্ধকার গুহাতল হইতে সবলে উৎপাটিত করিয়া সমাজের শূন্য আসনে বিনম্রবিনীতভাবে আমাদের সমাজপতির অভিষেক করি— আশ্রয়চ্যুত সমাজকে সনাথ করি—শুভক্ষণে আমাদের দেশের মাতৃগৃহকক্ষে মঙ্গলপ্রদীপটিকে উজ্জল করিয়া তুলি—শঙ্খ বাজিয়া উঠুক, ধূপের পবিত্রগন্ধ উদগত হইতে থাক্‌—দেবতার অনিমেষ কল্যাণদৃষ্টির দ্বারা সমস্ত দেশ আপনাকে সর্ব্বতোভাবে সার্থক বলিয়া একবার অনুভব করুক্!