পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
“স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধের পরিশিষ্ট।
৫৯

প্রহসনে পরিহাস করে। কিন্তু শান্তভাবে কেন বিচার করে না যে, —কেন এমনটা ঘটিতেছে?

 ডাক্তাররা বলেন, শরীর যখন সবল ও সক্রিয় থাকে, তখন রোগের আক্রমণ ঠেকাইতে পারে। নিদ্রিত অবস্থায় সর্দ্দিকাশি-ম্যালেরিয়া চাপিয়া ধরিবার অবসর পায়।

 বিলাতিসভ্যতার প্রভাবকে রোগের সঙ্গে তুলনা করিলাম বলিয়া মার্জ্জনা প্রার্থনা করি। স্বস্থানে সকল জিনিষই ভাল, অস্থানে পতিত ভাল জিনিষও জঞ্জাল। চোখের কাজল গালে লেপিলে লজ্জার বিষয় হইয়া উঠে। আমার উপমার ইহাই কৈফিয়ৎ।

 যাহা হউক, আমাদের চিত্ত যদি সকল বিষরে সতেজ-সক্রিয়, থাকিত, তাহা হইলে বিলাত আমাদের সে চিত্তকে বিহ্বল করিয়া দিতে পারিত না।

 দুর্ভাগ্যক্রমে ইংরাজ যখন তাহার কলবল, তাহার বিজ্ঞানদর্শন লইয়া আমাদের দ্বারে আসিয়া পড়িল, তখন আমাদের চিত্ত নিশ্চেষ্ট ছিল। যে তপস্যার প্রভাবে ভারতবর্ষ জগতের গুরুপদে আসীন হইয়াছিল, সেই তপস্যা তখন ক্ষান্ত ছিল। আমরা তখন কেবল মাঝে মাঝে পুঁথি রৌদ্রে দিতেছিলাম এবং গুটাইয়া ঘরে তুলিতেছিলাম। আমরা—কিছুই করিতেছিলাম না। আমাদের গৌরবের দিন বহুদূর পশ্চাতে দিগন্তরেখায় ছায়ার মত দেখা যাইতেছিল। সম্মুখের পুষ্করিণীর পাড়িও সেই পর্ব্বতমালার চেয়ে বৃহৎরূপে, সত্যরূপে প্রত্যক্ষ হয়!

 যাহা হউক, আমাদের মন যখন নিশ্চেষ্ট-নিষ্ক্রিয়, সেই সময়ে একটা সচেষ্ট-শক্তি, শুষ্ক জ্যৈষ্ঠের সম্মুখে আষাঢ়ের মেঘাগমের ন্যায় তাহার বজ্রবিদ্যুৎ, বায়ুবেগ ও বারিবর্ষণ লইয়া অকস্মাৎ দিগ্‌দিগন্ত বেষ্টন করিয়া দেখা দিল। ইহাতে অভিভূত করিবে না কেন?

 আমাদের বাঁচিবার উপায় আমাদের নিজের শক্তিকে সর্ব্বতোভাবে