পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
আত্মশক্তি।

কাল আমাদিগকে শাসনাধীনে রাখিবেন, ইহাই আমদের একমাত্র শ্রেয়? যদি বা বলি, তবে ইংরেজ কি অপোগণ্ড অর্ব্বাচীন যে এমন কথায় মুহূর্ত্তকালের জন্য শ্রদ্ধাস্থাপন করিতে পারিবে? আমাদিগকে এ কথা বলিতেই হইবে এবং না বলিলেও ইহা সুস্পষ্ট যে, যে পর্য্যন্ত না আমাদের নানাজাতির মধ্যে ঐক্যসাধনের শক্তি যথার্থভাবে, স্থায়িভাবে উদ্ভূত হয়, সে পর্য্যন্ত ইংরেজের রাজত্ব আমাদের পক্ষে প্রয়োজনীয়; কিন্তু পরদিনেই আর নহে।

 এমন স্থলে ইংরেজ যদি মমতায় মুগ্ধ হইয়া যদি ইংরেজি জাতীয় স্বার্থের দিকে তাকাইয়া—সেই স্বার্থকে যত বড় নামই দাও না কেন, না হয় তাহাকে ইম্পীরিয়ালিজ্‌মই বল—যদি স্বার্থের দিকে তাকাইয়া ইংরেজ বলে, আমাদের ভারতরাজ্যকে আমরা পাকাপাকি চিরস্থায়ী করিব, আমরা সমস্ত ভারতবর্ষকে এক হইতে দিবার নীতি অবলম্বন করিব না, তবে নিরতিশয় উচ্চঅঙ্গের ধর্ম্মোপদেশ ছাড়া এ কথার কি জবাব আছে? এ কথাটা যে সত্য যে, আমাদের দেশে সাহিত্য ক্রমশই প্রাণবান্-বলবান্ হইয়া উঠিতেছে; এই সাহিত্য ক্রমশই অল্পে অল্পে সমাজের উচ্চ হইতে নিম্ন স্তর পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত হইয়া পড়িতেছে; যে সকল জ্ঞান, যে সকল ভাব কেবল ইংরাজিশিক্ষিতদের মধ্যেই বদ্ধ ছিল, তাহা আপামরসাধারণের মধ্যে বিস্তারিত হইতেছে; এই উপায়ে ধীরে ধীরে সমস্তদেশের ভাবনা, বেদনা, লক্ষ্য এক হইয়া, পরিস্ফুট হইয়া উঠিতেছে; এক সময়ে যে সকল কথা কেবল বিদেশী পাঠশালের মুখস্থকথামাত্র ছিল, এখন তাহা দিনে দিনে স্বদেশের ভাষায়, স্বদেশের সাহিত্যে স্বদেশের আপন কথা হইয়া দাঁড়াইতেছে! আমরা কি বলিতে পারি, না, তাহা হইতেছে না, এবং বলিলেও কি তাহাতে কাহারো চোখে ধূলা দেওয়া হইবে? জলন্ত দীপ কি শিখা নাড়িয়া বলিবে, না, তাহার আলো নাই?