পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
আত্মশক্তি।

ইবার দরকার নাই, নিজের মনের মধ্যেই একবার দৃষ্টিপাত কর না। যখন য়ুনিভার্সিটি-বিল লইয়া আমাদের মধ্যে একটা আন্দোলন উঠিয়া ছিল, তখন আমরা কিরূপ সন্দেহ করিয়াছিলাম? আমরা সন্দেহ করিয়াছিলাম যে, গবর্মেণ্ট আমাদের বিদ্যার উন্নতিকে বাধা দিবার চেষ্টা করিতেছেন। কেনএরূপ করিতেছেন? কারণ লেখাপড়া শিখিয়া আমরা শাসনসম্বন্ধে অসন্তোষ অনুভব করিতে এবং প্রকাশ করিতে শিখিরাছি। মনেই কর, আমাদের এ সন্দেহ ভুল, কিন্তু তবু ইহা জন্মিয়াছিল, তাহাতে ভুল নাই।

 যে দেশে পার্লামেণ্ট আছে, সে দেশেও এডুকেশন্ বিল লইয়া ঘোরতর বাদবিবাদ চলিয়াছিল— কিন্তু দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে কি কোনো লোক স্বপ্নেও এমন সন্দেহ করিতে পারিত যে, যেহেতু শিক্ষালাভের একটা অনিবার্য্য ফল এই যে, ইহার দ্বারা লোকের আশাআকাঙ্ক্ষা সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে, নিজের শক্তিসম্বন্ধে তাহার মন সচেতন হইয়া ওঠে এবং সেই শক্তি প্রয়োগ করিবার ক্ষেত্র বিস্তার করিতে সে ব্যগ্র হয়, অতএব এত-বড় বালাইকে প্রশ্রয় না দেওয়াই ভাল। কখনই নহে, উভয় পক্ষই এই কথা মনে করিয়াছিল যে, দেশের মঙ্গলসাধনসম্বন্ধে পরম্পর ভ্রমে পড়িয়াছে। ভ্রম সংশোধন করিয়া দিবামাত্র তাহার ফল হাতে-হাতে, অতএব সেখানে তর্ক করা এবং কার্য্য করা একই।

 আমাদের দেশে সে কথা খাটে না। কারণ, কর্ত্তার ইচ্ছা কর্ম্ম এবং আমরা কর্ত্তা নহি! তার্কিক বলিয়া থাকেন—“সে কি কথা! আমরা যে বহুকোটি টাকা সরকারকে দিয়া থাকি, এই টাকার উপরেই যে সরকারের নির্ভর, আমাদের কর্ত্তৃত্ব থাকিবে না কেন! আমরা এই টাকার হিসাব তলব করিব।” গোরু যে নন্দনন্দনকে দুইবেলা দুধ দেয়, সেই দুধ খাইয়া নন্দনন্দন যে বেশ পরিপুষ্ট হইয়া উঠিয়াছেন,