পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
আত্মশক্তি।

অযৌক্তিক প্রতিপন্ন করিয়া আমাদের যে ক্ষণিক বৃথাতৃপ্তি, তাহাই ভোগ করিবার জন্য আমি এখানে উপস্থিত হই নাই, আমি দুটো-একটা গোড়ার কথা স্বদেশীলোকের কাছে উত্থাপন করিবার সুযোগ পাইয়া এই সভায় আমন্ত্রণ গ্রহণ করিরাছি। যে জাতীয় কথাটা লইয়া আমাদের সম্প্রতি ক্ষোভ উপস্থিত হইয়াছে এবং মাঝে মাঝে বারংবার ক্ষোভ উপস্থিত হয়, তাহাকে তাহার পশ্চাদ্বর্ত্তী বৃহৎ আশ্রয়ভূমির সহিত সংযুক্ত করিয়া না দেখিলে আমাদের সামঞ্জস্যবোধ পীড়িত হইবে। প্রাথমিক শিক্ষাবিধিঘটিত আক্ষেপটাকে আমি সামান্য উপলক্ষ্যস্বরূপ করিয়া তাহার বিপুল আধার-ক্ষেত্রটাকে আমি প্রধানভাবে লক্ষ্যগোচর করিবার যদি চেষ্টা করি, তবে দয়া করিয়া আমার প্রতি সকলে অসহিষ্ণু হইয়া উঠিবেন না।

 আমি নিজের সম্বন্ধে একটা কথা কবুল করিতে চাই। কর্ত্তৃপক্ষ আমাদের প্রতি কোন্‌দিন কিরূপ ব্যবস্থা করিলেন, তাহা লইয়া আমি নিজেকে অতিমাত্র ক্ষুব্ধ হইতে দিই না। আমি জানি, প্রত্যেকবার মেঘ ডাকিলেই ঋজ্র পড়িবার ভয়ে অস্থির হইয়া বেড়াইলে কোনো লাভ নাই। প্রথমত বজ্র পড়িতেও পারে, না-ও পড়িতে পারে; দ্বিতীয়ত যেখানে বজ্রপড়ার আয়োজন হইতেছে, সেখানে আমার গতিবিধি নাই, আমার পরামর্শ প্রতিবাদ বা প্রার্থনা সেখানে স্থান পায় না; তৃতীয়ত বজ্রপাতের হাত হইতে নিজেকে রক্ষা করিবার যদি কোনো উপায় থাকে, তবে সে উপায় ক্ষীণকণ্ঠে বজ্রের পাল্টা জবাব দেওয়া নহে, সে উপায় বিজ্ঞানসম্মত চেষ্টার দ্বারাই লভ্য; যেখান হইতে বজ্র পড়ে, সেইখান হইতে সঙ্গে সঙ্গে বজ্রনিবারণের তাম্রদণ্ডটাও নামিয়া আসে না, সেটা শান্তভাবে বিচারপূর্ব্বক নিজেকেই রচনা করিতে হয়।

 বস্তুত আজ যে পোলিটিকাল্ প্রসঙ্গ লইয়া এ সভায় উপস্থিত