পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সফলতার সদুপায়।
৭৩

হইয়াছি, সেটা হয়ত সম্পূর্ণ ফাঁকা আওয়াজ— কিন্তু কাল আবার আর-একটা কিছু মারাত্মক ব্যাপার উঠিয়া পড়া আশ্চর্য্য নহে। ঘড়িঘড়ি এমন কতবার ছুটাছুটি করিতে হইবে? আজ যাহার দ্বারে মাথা খুঁড়িয়া মরিলাম, তিনি সাড়া দিলেন না—অপেক্ষা করিয়া বসিয়া রহিলাম, ইঁহার মেয়াদ ফুরাইলে যিনি আসিবেন,—তাঁহার যদি দয়ামায়া থাকে। তিনি যদি-বা দয়া করেন, তবু আশ্বস্ত হইবার যো নাই, আরএক ব্যক্তি আসিয়া দয়ালুর দান কানে ধরিয়া আদায় করিয়া তাহার হাত-নাগাদ সুদসুদ্ধ কাটিয়া লইতে পারেন। এতবড় অনিশ্চয়ের উপরে আমাদের সমস্ত আশাভরসা স্থাপন করা যায়?

 প্রাকৃতিক নিয়মের উপরে ক্ষোপ চলে না। “সনাতন ধর্ম্মশাস্ত্রমতে আমার পাখা পোড়ানো উচিত নয়” বলিয়া পতঙ্গ যদি আগুনে ঝাঁপ দিয়া পড়ে, তবু তাহার পাখা পুড়িবে। সে স্থলে ধর্ম্মের কথা আওড়াইয়া সময় নষ্ট না করিয়া আগুনকে দুর হইতে নমস্কার করাই তাহার কর্ত্তব্য হইবে। ইংরেজ আমাদিগকে শাসন করিবে, আমাদিগকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করিয়া রাখিতে ইচ্ছা করিবে, যেখানে তাহার শাসনসন্ধি শিথিল হইবার লেশমাত্র আশঙ্কা করিবে, সেখানেই তৎক্ষণাৎ বলপূর্ব্বক দুটো পেরেক ঠুকিয়া দিবে, ইহা নিতান্তই স্বাভাবিক—পৃথিবীর সর্ব্বত্রই এইরূপ হইয়া আসিতেছে—আমরা সূক্ষ্ম তর্ক করিতে এবং নিখুঁৎ ইংরাজি বলিতে পারি বলিয়াই যে ইহার অন্যথা হইবে, তা হইবে না। এরূপ স্থলে আর যাই হোক্, রাগারাগি করা চলে না।

 মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মের উপরে উঠিতে পারে না যে তাহা নহে, কিন্তু সেটাকে প্রাত্যহিক হিসাবের মধ্যে আনিয়া ব্যবসা করা চলে না। হাতের কাছে একটাদৃষ্টান্ত মনে পড়িতেছে। সেদিন কাগজে পড়িয়াছিলাম, ডাক্তার চন্দ্র খৃষ্টান মিশনে লাখখানেক টাকা দিবার ব্যবস্থা করিয়াছেন—আইনঘটিত ত্রুটি থাকাতে তাঁহার মৃত্যুর পরে