পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
আত্মশক্তি।

উষ্ণপ্রধান উপনিবেশে ফসল উৎপাদন করিবেন, আমাদের অধিকার সস্তায় মজুর জোগান দেওয়া! বড়য়-ছোটয় মিলিয়া যজ্ঞ করিবার এই নিয়ম।

 কিন্তু ইহা লইয়া উত্তেজিত হইবার কোনো প্রয়োজন নাই। সক্ষম এবং অক্ষমের হিসাব যখন এক খাতায় রাখা হয়, তখন জমার অঙ্ক এবং খরচের অঙ্কের ভাগ এম্‌নিভাবে হওয়াই স্বাভাবিক—এবং বাহা স্বাভাবিক, তাহার উপর চোখ রাঙানো চলে না, চোখের জল ফেলাও বৃথা। স্বভাবকে স্বীকার করিয়াই কাজ করিতে হইবে। ভাবিয়া দেখ, আমরা যখন ইংরেজকে বলিতেছি, “তুমি সাধারণ মনুষ্যস্বভাবের চেয়ে উপরে ওঠ, তুমি স্বজাতির স্বার্থকে ভারতবর্ষের মঙ্গলের কাছে খর্ব্ব কর”, তখন ইংরেজ যদি জবাব দেয়, “আচ্ছা, তোমার মুখে ধর্ম্মোপদেশ আমরা পরে শুনিব, আপাতত তোমার প্রতি আমার বক্তব্য এই যে, সাধারণ-ননুষ্য-স্বভাবের যে নিম্নতন্ কোঠার আমি আছি, সেই কোঠায় তুমিও এস, তাহার উপরে উঠিয়া কাজ নাই—স্বজাতির স্বার্থকে তুমি নিজের স্বার্থ কর—স্বজাতির উন্নতির জন্য তুমি প্রাণ দিতে না পার, অন্তত আরাম বল, অর্থ বল, কিছু একটা দাও! তোমাদের দেশের জন্য আমরাই সমস্ত করিব, আর তোমরা নিজে কিছুই করিবে না!” এ কথা বলিলে তাহার কি উত্তর আছে? বস্তুত আমরা কে কি দিতেছি, কে কি করিতেছি! আর কিছু না করিয়া যদি দেশের খবর লইতাম, তাহাও বুঝি—আলস্য-পূর্ব্বক তাহাও লই না। দেশের ইতিহাস ইংরেজ রচনা করে, আমরা তর্জ্জমা করি; ভাষাতত্ত্ব ইংরেজ উদ্ধার করে, আমরা মুখস্থ করিয়া লই; ঘরের পাশে কি আছে জানিতে হইলেও হাণ্টার বই গতি নাই। তার পরে দেশের কৃষিসম্বন্ধে বল, বাণিজ্যসম্বন্ধে বল, ভূতত্ত্ব বল, নৃতত্ত্ব বল, নিজের চেষ্টার দ্বারা আমরা কিছুই সংগ্রহ করিতে চাই না। স্বদেশের প্রতি এমন একান্ত ঔৎসুক্যহীনতাসত্ত্বেও আমাদের