পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
আত্মশক্তি।

কিন্তু ইচ্ছা যে করে না, এক যে হই না। তবে চুলায় যাক্ স্বায়ত্ত শাসন! তবে দড়ি ও কলসীর চেয়ে বন্ধু আমাদের আর কেহ নাই!

 পরম্পরায় শুনিয়াছি, আমাদের দেশের কোনো রাজাকে একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্ম্মচারী বন্ধুভাবে বলিয়াছিলেন যে, গবর্মেণ্টকে অনুরোধ করিয়া আপনাকে উচ্চতর ´ উপাধি দিব— তাহাতে তেজস্বী রাজা উত্তর করিয়াছিলেন, দোহাই আপনার, আপনি আমাকে রাজা বলুন, বাবু বলুন, যাহা ইচ্ছা বলিয়া ডাকুন, কিন্তু আমাকে এমন উপাধি দিবেন না, যাহা আজ ইচ্ছা করিলে দান করিতে পারেন, কাল ইচ্ছা করিলে হরণ করিতেও পারেন। আমার প্রজারা আমাকে মহারাজ-অধিরাজ বলিয়াই জানে, সে উপাধি হইতে কেহই আমাকে বঞ্চিত করিতে পারে না। তেমনি আমরাও যেন বলিতে পারি, দোহাই সরকার, আমাদিগকে এমন স্বায়ত্তশাসন দিয়া কাজ নাই, যাহা দিতেও যতক্ষণ, কাড়িতেও ততক্ষণ—যে স্বায়ত্তশাসন আমাদের আছে, দেশের মঙ্গলসাধন করিবার যে অধিকার বিধাতা আমাদের হস্তে দিয়াছেন, মোহমুক্তচিত্তে, দৃঢ় নিষ্ঠার সহিত তাহাই যেন আমরা অঙ্গীকার করিতে পারি— রিপনের জয় হউক্ এবং কর্জ্জন্‌ও বাচিয়া থাকুন্!

 আমি পুনরায় বলিতেছি, দেশের বিদ্যাশিক্ষার ভার আমাদিগকে গ্রহণ করিতে হইবে। সংশয়ী বলিবেন, শিক্ষার ভার যেন আমরা লইলাম, কিন্তু কর্ম্ম দিবে কে? কর্ম্মও আমাদিগকে দিতে হইবে। একটি বৃহৎ স্বদেশী কর্ম্মক্ষেত্র আমাদের আয়ত্তগত না থাকিতে আমাদিগকে চিরদিনই দুর্ব্বল থাকিতে হইবে, কোনো কৌশলে এই নির্জ্জীব দুর্ব্বলতা হইতে নিষ্কৃতি পাইব না। যে আমাদিগকে কর্ম্ম দিবে, সেই আমাদের প্রতি কর্ত্তৃত্ব করিবে, ইহার অন্যথা হইতেই পারে না,—যে কর্ত্তৃত্ব লাভ করিবে, সে আমাদিগকে চালনা করিবার কালে নিজের