পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
আত্মশক্তি।

পক্ষে সকলের চেয়ে প্রয়োজনীয় হইয়া উঠিয়াছে। এমন একটি স্থান করিতে হইবে, যেখানে দেশ জিনিষটা যে কি, তাহা ভূরিপরিমাণে মুখের কথায় বুঝাইবার বৃথা চেষ্টা করিতে হইবে না, যেখানে সেবাসূত্রে দেশের ছোট-বড়, দেশের পণ্ডিত-মূর্খ সকলের মিলন ঘটিবে।

 দেশের বিচ্ছিন্ন শক্তিকে একস্থানে সংহত করিবার জন্য, কর্ত্তব্যবুদ্ধিকে একস্থানে আকৃষ্ট করিবার জন্য আমি যে একটি স্বদেশীসংসদ গঠিত করিবার প্রস্তাব করিতেছি, তাহা যে একদিনেই হইবে—কথাটা পড়িবামাত্রই অম্‌নি যে দেশের চারিদিক্ হইতে সকলে সমাজের এক পতাকার তলে সমবেত হইবে, এমন আমি আশা করি না। স্বাতন্ত্র্যবুদ্ধিকে খর্ব্ব করা, উদ্ধত অভিমানকে দমন করা, নিষ্ঠার সহিত নিয়মের শাসনকে গ্রহণ করা, এ সমস্ত কাজের লোকের গুণ—কাজ করিতে করিতে এই সকল গুণ বাড়িয়া উঠে, চিরদিন পুঁথি পড়িতে ও তর্ক করিতে গেলে ঠিক তাহার উল্টা হয় এই সকল গুণের পরিচয় যে আমরা প্রথম হইতেই দেখাইতে পারিব, তাহাও আমি আশা করি না। কিন্তু এক জায়গায় এক হইবার চেষ্টা, যত ক্ষুদ্র আকারে হৌক, আরম্ভ করিতে হইবে। আমাদের দেশের যুবকদের মধ্যে এমন সকল খাঁটিলোক, শক্তলোক যাঁহারা আছেন, যাঁহারা দেশের কল্যাণকর্ম্মকে দুঃসাধ্য জানিয়াই দ্বিগুণ উৎসাহ অনুভব করেন এবং সেই কর্ম্মের আরম্ভকে অতি ক্ষুদ্র জানিয়াও হতোৎসাহ হন না, তাঁহাদিগকে একজন অধিনেতার চতুর্দ্দিকে একত্র হইতে বলি। দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এইরূপ সম্মিলনী যদি স্থাপিত হয় এবং তাঁহারা যদি একটি মধ্যবর্ত্তী সংসদকে ও সেই সংসদের অধিনায়ককে সম্পূর্ণভাবে কর্ত্তৃত্বে বরণ করিতে পারেন, তবে একদিন সেই সংসদ সমস্ত দেশের ঐক্যক্ষেত্র ও সম্পদের ভাণ্ডার হইয়া উঠিতে পারে। সুবিস্তীর্ণ আরম্ভের অপেক্ষা করা, সুবিপুল আয়োজন ও সমারোহের প্রত্যাশা করা কেবল