পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ।

 অদ্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদিগকে অভ্যর্থনা করিবার জন্য বঙ্গীয়-সাহিত্যপরিষদ্ এই সভা আহ্বান করিয়াছেন। তোমাদিগকে সর্ব্বপ্রথমে সম্ভাষণ করিবার ভার আমার উপরে পড়িয়াছে।

 ছাত্রদের সহিত বঙ্গীয়সাহিত্যপরিষদের কোন‍্খানে যোগ, সে কথা হয় ত তোমরা জিজ্ঞাসা করিতে পার। যোগ আছে। সেই যোগ অনুভব করা ও ঘনিষ্ঠ করিয়া তোলাই অদ্যকার এই সভার একটি উদ্দেশ্য।

 তোমরা সকলেই জান, আকাশে যে ছায়াপথ দেখা যায়, তাহার স্থানে স্থানে তেজ পুঞ্জীভূত হইয়া নক্ষত্র আকার ধারণ করিতেছে এবং অপর অংশে জ্যোতির্বাষ্প অসংহতভাবে ব্যাপ্ত হইয়া আছে—কিন্তু সংহত অসংহত সমস্তটা লইয়াই এই ছায়াপথ।

 আমাদের বাংলাদেশেও যে জ্যোতির্ম্ময়, সারস্বত ছায়াপথ রচিত হইয়াছে, বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎকে তাহারই একটি কেন্দ্রবদ্ধ সংহত অংশ বলা যাইতে পারে, ছাত্রমণ্ডলী তাহার চতুর্দ্দিকে জ্যোতির্বাষ্পের মত বিকীর্ণ অবস্থায় আছে। এই ঘন অংশের সঙ্গে বিকীর্ণ অংশের যখন জাতিগত ঐক্য আছে, তখন সে ঐক্য সচেতনভাবে অনুভব করা চাই, তখন এই দুই আত্মীয় অংশের মধ্যে আদানপ্রদানের যোগস্থাপন করা নিতান্ত আবশ্যক।

 যে ঐক্যের কথা আজ আমি বলিতেছি, পঞ্চাশবছর পূর্ব্বে তাহা মুখে আনিবার জো ছিল না। তখন ইংরেজিশিক্ষামদে উন্মত্ত ছাত্রগণ নাতৃভাষার দৈন্যকে পরিহাস করিতে কুণ্ঠিত হন নাই এবং উপবাসী দেশীয়সাহিত্যকে একমুষ্টি অন্ন না দিয়া বিদায় করিয়াছেন।