পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
আত্মশক্তি।

আসিতেছে। একদিন গেছে, যখন আমাদের শিক্ষিতলোকেরা ইংরেজিপুঁথির প্রত্যেক কথাই বেদবাক্য বলিয়া জ্ঞান করিত। ইংরেজিগ্রস্ততা এতদূর পর্য্যন্ত সাংঘাতিক হইয়া উঠিয়াছিল যে, ইংরেজি বিধিবিধানের সহিত কোনো প্রকারে নিলাইতে না পারিয়া জামাইষষ্ঠী ফিরাইয়া দিয়াছে এবং আমোদ করিয়া বান্ধবের গায়ে আবির-লেপনকে চরিত্রের একটা চিরস্থায়ী কলঙ্ক বলিয়া গণ্য করিয়াছে,—এত বড় শিক্ষিত মূর্খতার প্রমাণ আমরা পাইয়াছি।

 এ রোগের সমস্ত উপসর্গ যে একেবারে কাটিয়াছে, তাহা বলিতে পারি না, কিন্তু আরোগ্যের লক্ষণ দেখা দিয়াছে। আজকাল আমরা ইংরেজি ছাপাখানার দ্বারে ধন্না না দিয়া নিজে সন্ধান করিতে, নিজে বাচাই করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, এমন কি, পুঁথির প্রতিবাদ করিতেও সাহস হয়।

 নিজের মধ্যে এই যে একটা স্বাতন্ত্র্যের অনুভূতি, যে অনুভূতি না থার্কিলে শক্তির যথার্থ স্ফুর্ত্তি হইতে পারে না, ইহা কোনো একটা দিকে আরম্ভ হইলে ক্রমে সকলদিকেই আপনাকে প্রকাশ করিতে থাকে। ধর্ম্মে, কর্ম্মে, সমাজে, সর্ব্বত্র আমরা ইহার পরিচয় পাইতেছি। কিছুকাল পূর্ব্বে আমাদের দেশের শাস্ত্র এবং শাসন সমস্তই আমরা খৃষ্টান পাদ্‌রির চোখে দেখিতাম—পাদ্‌রির কষ্টিপাথরে কোন্‌টাতে কি রকম দাগ পড়িতেছে, ইহাই আলোচনা করিয়া দেশের সমস্ত জিনিষকে বিচার করিতে হইত।

 প্রথম-প্রথম সে বিচারে দেশের কোনো জিনিষেরই মুল্য ছিল না। তার পরে মাঝে আর একটু ভাল লক্ষণ দেখা দিল। তখন আমরা বিলিতি গুরুকে বলিতে লাগিলাম, তোমাদের দেশে যা-কিছু গৌরবের বিষয় আছে, আমাদের দেশেও তা সমস্তই ছিল;—আমাদের দেশে রেলগাড়ি এবং বেলুন ছিল, শাস্ত্রে তাহার প্রমাণ, আছে এবং ঋষিরা জানিতেন সূর্যালোকে গাছপালা অক্সিজেন্, নিশ্বাস পরিত্যাগ করে,