পাতা:আত্মশক্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
আত্মশক্তি।

করিতে পারি, তাহাতে দুইদিকে লাভ—এক ত ফললাভ, দ্বিতীয়ত নিজে কাজ করাটাই একটা লাভ, সেটা ফললাভের চেয়ে বেশি বই কম নয়—সেই গৌরবের প্রতি লক্ষ্য করিয়াই আমাদের দেশের গুরু বলিয়াছেন, ফলের প্রতি আসক্তি না রাখিয়া কর্ম্ম করিবে। ভিক্ষার অগৌরব এই যে, ফললাভ হইলেও নিজের শক্তি নিজে খাটাইবার যে সার্থকতা, তাহা হইতে বঞ্চিত হইতে হয়।

 যাহা হউক, ইহা দেখা যাইতেছে যে, সকল দিক্ দিয়াই আমরা নিজের স্বাধীনশক্তির গৌরব অনুভব করিবার একটা উদ্যম অন্তরের মধ্যে অনুভব করিতেছি—সাহিত্য হইতে আরম্ভ করিয়া পলিটিক্স পর্য্যন্ত কোথাও ইহার বিচ্ছেদ নাই।

 ইহার একটা ফল এই দেখিতেছি, পূর্ব্বে ইংরেজিশিক্ষা আমাদের দেশে প্রাচীন-নবীন, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উচ্চ-নীচ, ছাত্র ও সংসারীর মধ্যে যে একটা বিচ্ছেদের সৃষ্টি করিয়াছিল, এখন তাহার উল্টা কাজ আরম্ভ হইয়াছে, এখন আবার আমরা নিজেদের ঐক্যসূত্র সন্ধান করিয়া পরস্পর ঘনিষ্ঠ হইবার চেষ্টা করিতেছি। মধ্যকালের এই বিচ্ছিন্নতাই পরিণামের মিলনকে যথার্থভাবে সম্পূর্ণ করিবে, তাহার সন্দেহ নাই।

 এই মিলনের আকর্ষণেই আজ বঙ্গভাষা-বঙ্গসাহিত্য আমাদের ইংরেজিবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদিগকেও আপন করিয়াছে। একদিন যেখানে বিপক্ষের দুর্ভেদ্য দুর্গ ছিল, সেখান হইতেও বঙ্গের বিজয়িনী বাণী স্বেচ্ছাসমাগত সেবকদের অর্ঘলাভ করিতেছেন।

 পূর্ব্বে এমন দিন ছিল, যখন এই ইংরেজীপাঠশালা হইতে আমাদের একেবারে ছুটি ছিল না। বাড়ী আসিতাম, সেখানেও পাঠশালা পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিয়া আসিত। বন্ধুকেও সম্ভাবণ করিতাম ইংরেজিতে, পিতাকেও পত্র লিখিতাম ইংরেজিতে, প্রাণের কথা বলিতাম ইংরেজি