পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

সমাজ-ধর্মের মূল্য বিড়ালকে মার্জার বলিয়া বুঝাইবার প্রয়াস করায় পাণ্ডিত্য প্রকাশ যদি বা পায়, তথাপি পণ্ডিতের কাণ্ডজ্ঞান সম্বন্ধে লােকের যে দারুণ সংশয় উপস্থিত হইবে, তাহা আমি নিশ্চয় জানি। জানি বলিয়াই, প্রবন্ধ লেখার প্রচলিত পদ্ধতি যাই হউক, প্রথমেই ‘সমাজ’ কথাটা বুঝাইবার জন্য ইহার ব্যুৎপত্তিগত এবং উৎপত্তিগত ইতিহাস বিকৃত করিয়া, বিশেষ ব্যাখ্যা করিয়া, অবশেষে ইহা এ নয়, ও নয়, তা নয়— বলিয়া পাঠকের চিত্ত বিভ্রান্ত করিয়া দিয়া গবেষণাপূর্ণ উপসংহার করিতে আমি নারাজ। আমি জানি, এ প্রবন্ধ পড়িতে যাহার ধৈর্য থাকিবে, তাঁহাকে ‘সমাজের’ মানে বুঝাইতে হইবে না। দলবদ্ধ হইয়া বাস করার নামই যে সমাজ নয়—নৌরােলা মাছের ঝাঁক, মৌমাছির চাক, পিঁপড়ার বাসা বা বীর হনুমানের মস্ত দলটাকে যে ‘সমাজ’ বলে না, এ খবর আমার নিকট হইতে এই তিনি নূতন শুনিবেন না। তবে, কেহ যদি বলেন, সমাজ’ সম্বন্ধে মােটামুটি একটা ঝাপসা গগাছের ধারণা মানুষের থাকিতে পারে বটে, কিন্তু তাই বলিয়া সূক্ষ্ম অর্থ প্রকাশ করিয়া দেখাইবার চেষ্টা করা কি প্রবন্ধকারের উচিত নয় ? তাহাদের কাছে আমার বক্তব্য এই যে, না। কারণ সংসারে অনেক বস্তু আছে, যাহার মােটামুটি ঝাপসা ধারণাটাই সত্য বস্তু,-সূক্ষ্ম করিয়া দেখাইতে যাওয়া শুধু বিড়ম্বনা নয়, ফাকি দেওয়া ! ঈশ্বর বলিলে যে ধারণাটা মানুষের হয়, সেটা অত্যন্তই মােটা, কিন্তু সেইটাই কাজের জিনিস। এই মােটার উপরেই দুনিয়া চলে, সুষ্মের উপর নয়। সমাজও ঠিক তাই। একজন অশিক্ষিত পাড়াগাঁয়ের চাষা ৪১