পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

নাই, হইতেও পারে না। আর পারে না বলিয়াই এখনও ভগবানের রাজ্য বজায় রহিয়াছে; মানুষ সংসারে আজীবন বাস করিয়া জীবনান্তে তঁাহারই পদাশ্রয়ে পেঁৗছিবার ভরসা করিতেছে। অতএব মৃতদেহের সৎকার করিতে হয়, বিবাহ করিয়া সন্তান প্রতিপালন করিতে হয়, প্রতিবেশীকে সুবিধা পাইলেই খুন করিতে নাই, চুরি করা পাপ, এইসব স্কুল, অথচ, অত্যাবশ্যক সামাজিক ধর্ম সবাই মানিতে বাধ্য ; তা তাহার বাড়ি আফ্রিকার সাহারাতেই হউক, আর এশিয়ার সাইবিরিয়াতেই হউক । কিন্তু এই সকল আমার প্রধান আলােচ্য বিষয় নয়। অথচ, এমন কথাও বলি নাই, মনেও করি না যে, যাহা কিছু ছােট, তাহাই তুচ্ছ এবং আলােচনার অযােগ্য। পৃথিবীর যাবতীয় সমাজের সম্পর্কে ইহারা কাজে না আসিলেও বিচ্ছিন্ন এবং বিশেষ সমাজের মধ্যে ইহাদের যথেষ্ট কাজ আছে এবং সে কাজ তুচ্ছ নহে। সকল ক্ষেত্রেই এই সকল কর্মসমষ্টি—যা দেশাচাররূপে প্রকাশ পায় -তাহার যে অর্থ আছে, কিংবা সে অর্থ সুস্পষ্ট, তাহাও নহে; কিন্তু ইহারাই যে বিভিন্ন স্থানে সার্বজনীন সামাজিক ধর্মের বাহক, তাহাও কেহ অস্বীকার করিতে পারে না। বহন করিবার এই সকল বিচিত্র ধারাগুলিকে চোখ মেলিয়া দেখাই আমার লক্ষ্য। সামাজিক মানুষকে তিন প্রকার শাসন-পাশ আজীন বহন করিতে হয়। প্রথম রাজ-শাসন, দ্বিতীয় নৈতিক-শাসন এবং তৃতীয় যাহাকে দেশাচার কহে, তাহারই শাসন। রাজ-শাসন ; আমি স্বেচ্ছাচারী দুবৃত্ত রাজার কথা বলিতেছি নাযে রাজা সুসভ্য, প্রজাবৎসল –তঁাহার শাসনের মধ্যে তাহার প্রজাবৃন্দেরই সমবেত ইচ্ছা প্রচ্ছন্ন হইয়া থাকে। তাই খুন করিয়া যখন সেই শাসন-পাশ গলায় বাঁধিয়া ফঁসিকাঠে গিয়া উঠি, তখন সে ফঁাসের মধ্যে আমার নিজের ইচ্ছা যে প্রকারান্তরে মিশিয়া নাই, এ কথা বলা যায় না। অথচ মানবের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিবশে আমার নিজের বেলা ৪৩