পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

সুতরাং তাহাতে কাজ নাই ; যাহার অতিরুচি হয়, তিনি ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের মূল প্রবন্ধে দেখিয়া লইবেন। তথাপি এ-সকল কথা আমি তুলিতাম না। কিন্তু এই দুটা কথা আমি সুস্পষ্ট করিয়া দেখাইতে চাই, আমাদের দেশের শাস্ত্রীয় বিচার এবং শাস্ত্রীয় আলােচনা কিরূপ ব্যক্তিগত ও নিরর্থক উচ্ছাসপূর্ণ হইয়া উঠে। এবং উৎকট গোঁড়ামি ধমনীর আর্যরক্তে এমন করিয়া তাণ্ডব নৃত্য বাধাইয়া দিলে মুখ দিয়া শুধু যে মান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপভাষাই বাহির হয়, তাহা নয়, এমন সব যুক্ত বাহির হয়, যাহা শাস্ত্রীয় বিচারেই বল, আর যে-কোন বিচারেই বল, কোন কাজেই লাগে না। কিন্তু স্বর্গীয় দত্ত মহাশয়ের অপবাধটা কি ? পণ্ডিতের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া থাকে। সে কি মারাত্মক অপরাধ ? পাশ্চাত্য পণ্ডিত কি পণ্ডিত নন যে, তাহার মতানুযাযী হইলেই গালিগালাজ খাইতে হইবে। দ্বিতীয় বিবাদ ঋকবেদের ‘অগ্নে’ শব্দ লইয়া । এই পদাঙ্কাসাবী লােকটা বিবাদ ঋকবেদের ‘অগ্নে’ শব্দ লইয়া। এই পদাঙ্কানুসারী লােকটা কেন যে জানিয়া শুনিয়াও এ শব্দটাকে প্রক্ষিপ্ত মনে করিয়া ‘অগ্রে পাঠ গ্রহণ করিয়াছিল, সে আলোচনা পরে হইবে। কিন্তু ভট্টাচার্য মহাশয়েব কি জানা নাই যে, বাংলার অনেক পণ্ডিত আছেন যাহারা পাশ্চাত্য পণ্ডিতের পদাঙ্ক অনুসরণ না করিয়াও অনেক প্রামাণ্য শাস্ত্রগ্রন্থের মধ্যে প্রক্ষিপ্ত শ্লোকেব অস্তিত্ব আবিষ্কার করিয়া গিয়াছেন, এবং তাহা স্পষ্ট করিয়া বলিতেও কুণ্ঠিত হন নাই। কারণ, বুদ্ধিপূর্বক নিরপেক্ষ আলােচনার দ্বারা যদি কোন শাস্ত্রীয় শ্লোককে প্রক্ষিপ্ত বলিয়া মনে হয়, তাহা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করিয়া বলাই ত শাস্ত্রের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা। জ্ঞানতঃ চাপাচুপি দিয়া রাখা বা অজ্ঞানতঃ প্রত্যেক অনুস্বার বিসর্গটিকে পর্যন্ত নির্বিচারে সত্য বলিয়া প্রচার করায় কোন পৌরুষ নাই। তাহাতে শাস্ত্রেরও মান্য বাড়ে না, ধর্মকেও খাটো করা হয়।