পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২8
আনন্দ মঠ।

 ধীর। তাহাও বলিবার ইচ্ছা আছে―তরবারি বসাইও না―বলিতেছি। এই সস্তান ধর্ম্মে আমার হাড় জ্বর জ্বর হইয়াছে, আমি ইহা পরিত্যাগ করিয়া স্ত্রীপুত্রের মুখ দেখিয়া দিনপাত করিবার জন্য বড় উতলা হইয়াছি। আমি এ সন্তানধর্ম্ম পরিত্যাগ করিব। কিন্তু আমার কি বাড়ী গিয়া বসিবার যো আছে? বিদ্রোহী বলিয়া আমাকে অনেকে চিনে। ঘরে গিয়া বসিলেই হয় রাজপুরুষে মাথা কাটিয়া লইয়া যাইবে, নয় সন্তানেরাই বিশ্বাসঘাতী বলিয়া মারিয়া ফেলিয়া, চলিয়া যাইবে। এই জন্য তোমাকে আমার পথে লইয়া যাইতে চাই।

 ভব। কেন, আমায় কেন?

 ধীর। সেইটি আসল কথা। এই সন্তানসেনা তোমার আজ্ঞাধীন―সত্যানন্দ এখন এখানে নাই, তুমি ইহার নায়ক। তুমি এই সেনা লইয়া যুদ্ধ কর, তোমার জয় হইবে, ইহা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। যুদ্ধজয় হইলে তুমি কেন স্বনামে রাজ্যস্থাপন কর না, সেনা ত তোমার আজ্ঞাকারী। তুমি রাজা হও―কল্যাণী তোমার মন্দোদরী হউক, আমি তোমার অনুচর হইয়া স্ত্রীপুত্রের মুখাবলোকন করিয়া দিনপাত করি, আর আশীর্ব্বাদ করি। সস্তান ধর্ম্ম অতল জলে ডুবাইয়া দাও।

 ভবানন্দ, ধীরানন্দের স্কন্ধ হইতে তরবারি ধীরে ধীরে নামাইলেন। বলিলেন, “ধীরানন্দ যুদ্ধ কর, তোমায় বধ করিব। আমি ইন্দ্রিয়পরবশ হইয়া থাকিব, কিন্তু বিশ্বাসহন্তা নই। তুমি আমাকে বিশ্বাসঘাতক হইতে পরামর্শ দিয়াছ। নিজেও বিশ্বাস ঘাতকী তোমাকে মারিলে ব্রহ্মহত্যা হয় না। তোমাকে মারিব।” ধীরানন্দ কথা শেষ হইতে না হইতেই ঊর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল। ভবানন্দ তাহার পশ্চাদ্‌বর্ত্তী হইলেন না। ভবানন্দ কিছুক্ষণ অন্য-