পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
আনন্দ মঠ।

গেলাম, ইহাই আমার দুঃখ। একমুহূর্ত্তে দেহের ধ্বংস হইতে পারে,―দেহের ধ্বংসেই ইন্দ্রিয়ের ধ্বংস―আমি সেই ইন্দ্রিয়ের বশীভূত হইলাম? আমার মরণ শ্রেয়। ধর্ম্ম ত্যাগী? ছি! মরিব!” এমন সময়ে পেচক মাথার উপর মৃদু গম্ভীর শব্দ করিল। ভবানন্দ তখন মুক্তকণ্ঠে বলিতে লাগিলেন “ও কি শব্দ? কাণে যেন গেল, যেন যম আমায় ডাকিতেছে। আমি জানি না কে শব্দ করিল, কে আমায় ডাকিল, কে আমায় বিধি দিল, কে মরিতে বলিল! পুণ্যময়ি অনন্তে! তুমি শব্দময়ী, কিন্তু তোমার শব্দের তো মর্ম্ম আমি বুঝিতে পারিতেছি না। আমায় ধর্ম্মে মতি দাও, আমার পাপ হইতে নিরত কর। ধর্ম্মে, হে গুরুদেব! ধর্ম্মে যেন আমার মতি থাকে।”

 তখন সেই ভীষণ কাননমধ্য হইতে মতি মধুর অথচ গম্ভীর, মর্ম্মভেদী মনুষ্যকণ্ঠ শ্রুত হইল; কে বলিল “ধর্ম্মে তোমার মতি থাকিবে—আশীর্ব্বাদ করিলাম।”

 ভবানন্দের শরীরে রোমাঞ্চ কইল। “একি এ? এ যে গুরুদেবের কণ্ঠ। মহারাজ কোথায় আপনি! এ সময়ে দাসকে দর্শন দিন।”

 কিন্তু কেহ দর্শন দিল না—কেহ উত্তর করিল না। ভবানন্দ পুনঃ পুনঃ ডাকিলেন—উত্তর পাইলেন না। এ দিক ওদিক খুঁজিলেন―কোথাও কেহ নাই।

 যখন রজনী প্রভাতে প্রাতঃসূর্য্য উদিত হইয়া বৃহৎ অরণ্যের শিরঃস্থ শ্যামল পত্ররাশিতে প্রতিভাসিত হইতেছিল তখন ভবানন্দ মঠে আসিয়া উপস্থিত হইলেন! কর্ণে প্রবেশ করিল—“হরে মুরারে! হরে মুরারে!” চিনিলেন সত্যানন্দের কণ্ঠ। বুঝিলেন, প্রভু প্রত্যাগমন করিয়াছেন।