করিল তাহাও কেহ বুঝিল না, কেবল তারা দুজনেই মনে মনে বুঝিল, যে হয় ত এ জন্মের মত এই বিদায়। তখন নবীনানন্দ, দক্ষিণ বাহু উত্তোলন করিয়া সকলকে বলিলেন “ভাই! এই সময় গাও “জয় জগদীশ হরে!” তখন সেই দশসহস্র সন্তান এককণ্ঠে নদী কানন আকাশ প্রতিধ্বনিত করিয়া, তোপের শব্দ ডুবাইয়া দিয়া সহস্র সহস্র বাহু উত্তোলন করিয়া গায়িল,
“জয় জগদীশ হরে
ম্লেচ্ছনিবহনিধনে কলয়সি করবালং―”
এমন সময়ে সেই ইংরেজের গোলাবৃষ্টি আসিয়া কাননমধ্যে সন্তানসম্প্রদায়ের উপয় পড়িতে লাগিল। কেহ গায়িতে গায়িতে ছিন্নমস্তক, ছিন্ন বাহু, ছিন্ন হৃৎ হইয়া মাটীতে পড়িল, তথাপি কেহ গীত বন্ধ করিল না, সকলে গায়িতে লাগিল, “জয় জগদীশ হরে”! গীত সমাপ্ত হইলে সকলেই একেবারে নিস্তব্ধ হইল। সেই নিবিড় কানন, সেই নদীসৈকত, সেই অনন্ত বিজন একেবারে গম্ভীর নীরবে নিবিষ্ট হইল, কেবল সেই অতি ভয়ানক কামানের ধ্বনি আর দূরশ্রুত গোরার সমবেত অস্ত্রের ঝঞ্ঝনা ও পদধ্বনি।
তখন সত্যানন্দ সেই গভীর নিস্তব্ধ মধ্যে অতি উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন “জগদীশ হরি তোমাদিগকে কৃপা করিবেন―তোপ কত দূর?”
উপর হইতে একজন বলিল “এই কাননের অতি নিকট, একখানা ছোট মাঠ পার মাত্র!”
সত্যানন্দ বলিল “কে তুমি?”
উপর হইতে উত্তর হইল “আমি নবীনানন্দ।”
তখন সত্যানন্দ বলিলেন “তোমরা দশ সহস্র সন্তান আছ, তোমাদেরই জয় হইবে, তোপ কাড়িয়া লও।” তখন অগ্রবর্ত্তী অশ্বারোহী জীবানন্দ বলিল “আইস।”