বিচারিণী শান্তির কাছে শুনিয়াছিল। ক্রমে ক্রমে সকল মহেন্দ্রকে শুনাইতে লাগিল।
মহেন্দ্র প্রথমে বিশ্বাস করিলেন না। শেষে আনন্দে অভিভূত হইয়া মুগ্ধপ্রায় হইলেন।
সেই রজনী প্রভাতে শান্তির সাহায্যে মহেন্দ্রের সঙ্গে কল্যাণীর সাক্ষাৎ হইল। নিস্তব্ধ কাননমধ্যে, ঘনবিন্যস্ত শালতরুশ্রেণীর অন্ধকার ছায়া মধ্যে, পশু পক্ষী ভগ্ননিদ্র হইবার পূর্ব্বে, তাহাদিগের পরস্পরের দর্শনলাভ হইল। সাক্ষী কেবল সেই নীলগগনবিহারী ম্লানকিরণ আকাশের নক্ষত্রনিচয়, আর সেই নিবাত নিষ্কম্প অনন্ত শালতরুশ্রেণী। দূরে কোন শীলাসংঘর্ষণনাদিনী, মধুর কল্লোলিনী, সংকীর্ণা নদীর তর তর শব্দ, কোথাও প্রাচীসমুদিত ঊষামুকুটজ্যোতিঃ সন্দর্শনে আহ্লাদিত এক কোকিলের রব।
বেলা এক প্রহর হইল। সেখানে শান্তি জীবানন্দ আসিয়া দেখা দিল। কল্যাণী শান্তিকে বলিল—“আমরা আপনার কাছে বিনা মূল্যে বিক্রীত। আমাদের কন্যাটির সন্ধান বলিয়া দিয়া এ উপকার সম্পূর্ণ করুন।”
শান্তি জীবানন্দের মুখের প্রতি চাহিয়া বলিল “আমি ঘুমাই। অষ্ট প্রহরের মধ্যে বসি নাই—দুই রাত্র ঘুমাই নাই—আমি যাই পুরুষ!”
কল্যাণী ঈষৎ হাসিল। জীবানন্দ মহেন্দ্রের মুখপানে চাহিয়া বলিলেন, “সে ভার, আমার উপর রহিল। আপনারা পদচিহ্নে গমন করুন—সেইখানে কন্যাকে পাইবেন।”
জীবানন্দ ভরূইপুরে নিমাইয়ের নিকট হইতে মেয়ে আনিতে গেলেন—কাজটা বড় সহজ বোধ হইল না।
তখন নিমাই প্রথমে ঢোক গিলিল, একবার এদিক ওদিক