নন্দ একবার মাত্র মহেন্দ্রের সাক্ষাৎ পাইয়া বলিলেন, “আজ শেষ। এস এই খানে মরি।”
মহেন্দ্র বলিল, “মরিলে যদি রণজয় হইত তবে মরিতাম। বৃথা মৃত্যু বীরের ধর্ম্ম নহে।”
জীব। আমি বৃথাই মরিব। তবু যুদ্ধে মরিব। তখন পাছু ফিরিয়া, উচ্চৈঃস্বরে জীবানন্দ ডাকিল, “কে হরিনাম করিতে করিতে মরিতে চাও, আমার সঙ্গে আইস।”
অনেকে অগ্রসর হইল। জীবানন্দ বলিল, “অমন নহে। হরিসাক্ষাৎ শপথ কর, জীবন্তে ফিরিবে না।”
যাহারা আগু হইয়াছিল, তাহারা পিছাইল। জীবানন্দ বলিলেন,
“কেহ আসিবে না? তবে আমি একা চলিলাম।”
জীবানন্দ অশ্বপৃষ্ঠে উঁচু হইয়া বহুদূর পশ্চাৎস্থিত মহেন্দ্রকে ডাকিয়া বলিলেন, “ভাই! নবীনানন্দকে বলিও আমি চলিলাম। লোকান্তরে সাক্ষাৎ হইবে।”
এই বলিয়া সেই বীরপুরুষ লৌহবৃষ্টি মধ্যে বেগে অশ্বচালন করিলেন। বামহস্তে বল্লম, দক্ষিণে বন্দুক, মুখে হরে মুরারে! হরে মুরারে! হরে মুরারে! যুদ্ধের সম্ভাবনা নাই। এ সাহসে কোন ফল নাই—তথাপি হরে মুরারে! হরে মুরারে! গায়িতে গায়িতে জীবানন্দ শত্রুব্যূহমধ্যে প্রবেশ করিলেন।
পলায়নপর সন্তানদিগকে মহেন্দ্র ডাকিয়া বলিল “দেখ, একবার তোমরা ফিরিয়া জীবানন্দ গোঁসাইকে দেখ। দেখিলে মরিবে না।”
ফিরিয়া কতকগুলি সন্তান জীবানন্দের অমানুষী কীর্ত্তি দেখিল। প্রথমে বিস্মিত হইল, তার পর বলিল “জীবানন্দ মরিতে জানে, আমরা জানি না? চল জীবানন্দের সঙ্গে আমরাও বৈকুণ্ঠে যাই।”