তেজে মহেন্দ্রের বাহিনী পর্ব্বত আরোহণ করিতে লাগিল। শিলাপ্রতিঘাতপ্রতিপ্রেরিত নির্ঝরিণীবৎ রাজসেনা বিলোড়িত, স্তম্ভিত, ভীত হইল। সেই সময়ে পঞ্চবিংশতি সহস্র সন্তানসেনা লইয়া স্বয়ং সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী পর্ব্বত শিখর হইতে, সমুদ্র প্রপাতবৎ তাহাদের উপর বিক্ষিপ্ত হইলেন। তুমুল যুদ্ধ হইল।
যেমন দুই খণ্ড প্রকাণ্ড প্রস্তরের সঙ্ঘর্ষে ক্ষুদ্র মক্ষিকা নিষ্পেষিত হইয়া যায়, তেমনি দুই সন্তানসেনা সঙ্ঘর্ষে সেই বিশাল রাজসৈন্য, পর্ব্বতসানুদেশে, নিঃশেষ নিষ্পেষিত হইল।
ওয়ারেণ হেষ্টিংসের কাছে সংবাদ লইয়া যায়, এমন লোক রহিল না।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ।
পূর্ণিমার রাত্রি!—সেই ভীষণ রণক্ষেত্র এখন স্থির। সেই ঘোড়ার দড়বড়ি, বন্দুকের কড়কড়ি, কামানের গুম্,—সর্ব্ব-ব্যাপীধূম, আর কিছুই নাই। কেহ হুর্রে বলিতেছে না—কেহ হরিধ্বনি করিতেছে না। শব্দ করিতেছে—কেবল শৃগাল, কুক্কুর, গৃধিনী। সর্ব্বোপরি, আহত ব্যক্তির ক্ষণিক আর্ত্তনাদ। কেহ ছিন্নহস্ত, কেহ ভগ্নমস্তক, কাহারও পা ভাঙ্গিয়াছে, কাহারও পঞ্জর বিদ্ধ হইয়াছে, কেহ ঘোড়ার নীচে পড়িয়াছে। কেহ ডাকিতেছে মা! কেহ ডাকিতেছে বাপ! কেহ চায় জল, কাহারও কামনা মৃত্যু। ‘বাঙ্গালী, হিন্দুস্থানী, ইংরেজ, মুসলমান, একত্র জড়াজডি; জীবন্তে মৃতে; মনুষ্যে অশ্বে, মিশামিশি ঠেসাঠেসি হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। সেই মাঘ মাসের পূর্ণিমার রাত্রে, দারুণ শীতে, উজ্জ্বল