তিনি বলিলেন, “তাও কি হয় মা! তুমি উহাকে বহিয়া পুষ্করিণীতীরে আনিতে পারিবে? আমি চিকিৎসক, উহার চিকিৎসা করিব।”
শান্তি অনায়াসে জীবানন্দকে কোলে তুলিয়া পুকুরের দিকে লইয়া চলিল। চিকিৎসক বলিলেন, “তুমি ইহাকে পুকুরে লইয়া গিয়া, রক্ত সকল ধুইয়া দাও। আমি ঔষধ লইয়া যাইতেছি।”
শন্তি জীবানন্দকে পুষ্করিণীতীরে লইয়া গিয়া রক্ত ধৌত করিল। তখনই চিকিৎসক বন্য লতা পাতার প্রলেপ লইয়া আসিয়া সকল ক্ষতমুখে দিল। তার পর, বারম্বার জীবানন্দের সর্ব্বাঙ্গে হাত বুলাইল। তখন জীবানন্দ এক দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িয়া উঠিয়া বসিল। শান্তির মুখপানে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “যুদ্ধে করে জয় হইল?”
শান্তি বলিল, “তোমারই জয়। এই মহাত্মাকে প্রণাম কর।”
তখন উভয়ে দেখিল কেহ কোথাও নাই! কাহাকে প্রণাম করিবে?
নিকটে বিজয়ী সন্তানসেনার বিষম কোলাহল শুনা যাইতেছিল, কিন্তু, শান্তি বা জীবানন্দ কেহই উঠিল না—সেই পূর্ণচন্দ্রের কিরণে সমুজ্জ্বল পুষ্করিণীর সোপানে বসিয়া রহিল। জীবানন্দের শরীর ঔষধের গুণে, অতি অল্প সময়েই সুস্থ হইয়া আসিল। তিনি বলিলেন, “শান্তি! সেই চিকিৎসকের ঔষধের আশ্চর্য্যগুণ! আমার শরীরে আর কোন বেদনা বা গ্লানি নাই—এখন কোথায় যাইবে চল। ঐ সন্তানসেনার জয়ের উৎসবের গোল শুনা যাইতেছে!”
শান্তি বলিল “আর ওখানে না। মার কার্য্যোদ্ধার হইয়াছে—এ দেশ সন্তানের হইয়াছে। আমরা রাজ্যের ভাগ চাহি না—এখন আর কি করিতে যাইব?”
জী। যা কাড়িয়া লইয়াছি, তা বাহুবলে রাখিতে হইবে।