পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ।
৫৫

পথিমধ্যে একটি স্ত্রীলোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইয়াছিল। সে সাত দিন খায় নাই, রাস্তার ধারে পড়িয়াছিল। তাহার জীবনদান জন্য জীবানন্দ দণ্ড দুই বিলম্ব করিয়াছিলেন। মাগীকে বাঁচাইয়া তাহাকে অতি কদর্য ভাষায় গালি দিতে দিতে (বিলম্বের অপরাধ তার) এখন আসিতেছিলেন। দেখিলেন, প্রভুকে মুসলমানে ধরিয়া লইয়া যাইতেছে—প্রভু গান গায়িতে গায়িতে চলিয়াছেন।

 জীবানন্দ মহাপ্রভু সত্যানন্দের সঙ্কেত সকল বুঝিতেন।

“ধীরসমীরে,     তটিনীতীরে,
বসতি বনে বরনারী”

 নদীর ধারে আবার কোন মাগী না খেয়ে পড়িয়া আছে না কি? ভাবিয়া চিন্তিয়া, জীবানন্দ নদীর ধারে ধারে চলিলেন। জীবানন্দ দেখিয়াছিলেন যে, ব্রহ্মচারী স্বয়ং মুসলমান কর্ত্তৃক নীত হইতেছেন। এস্থলে, ব্রহ্মচারীর উদ্ধারই তাঁহার প্রথম কাজ। কিন্তু জীবানন্দ ভাবিলেন, “এ সঙ্কেতের সে অর্থ নয়। তাঁর জীবনরক্ষার অপেক্ষাও তাঁহার আজ্ঞাপালন বড়—এই কথাই তাঁহার কাছে প্রথম শিখিয়াছি। অতএব তাঁহার আজ্ঞাপালনই করিব।”

 নদীর ধারে ধারে জীবানন্দ চলিল। যাইতে যাইতে সেই বৃক্ষতলে নদীতীরে দেখিল যে এক স্ত্রীলোকের মৃতদেহ আর এক জীবিতা শিশুকন্যা। পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে, মহেন্দ্রের স্ত্রী কন্যাকে জীবানন্দ একবারও দেখেন নাই। মনে করিলেন, হইলে হইতে পারে যে ইহারাই মহেন্দ্রের স্ত্রী কন্যা। কেন না প্রভুর সঙ্গে মহেন্দ্রকে দেখিলাম, তাহার স্ত্রী কন্যা দেখিলাম না। যাহা হউক মাতা মৃতা, কন্যাটী জীবিতা। আগে ইহার রক্ষাবিধান করা চাই—নহিলে বাঘ ভালুকে খাইবে। ভবানন্দ ঠাকুর এইখানেই কোথায় আছেন, তিনি স্ত্রীলোকটীর সৎকার করিবেন,