নগরাভিমুখে গিয়াছেন। কি জানি, যদি তিনি মুসলমানের হাতে পড়েন।”
ভবানন্দ বলিলেন, “তাঁহাকে আটক রাখে এমন মুসলমান বীরভূমে নাই। তথাপি আমি একবার নগর বেড়াইয়া আসি। তুমি মঠ রক্ষা করিও।”
এই বলিয়া ভবানন্দ এক নিভৃত কক্ষে গিয়া একটা বড় সিন্দুক হইতে কতকগুলি বস্ত্র বাহির করিলেন। সহসা ভবানন্দের রূপান্তর হইল, গেরুয়া বসনের পরিবর্ত্তে চুড়িদার পায়জামা, মেরজাই, কাবা, মাথায় আমামা, এবং পায়ে নাগরা শোভিত হইল। মুখ হইতে ত্রিপুণ্ড্রাদি চন্দনচিহ্নসকল বিলুপ্ত করিলেন। ভ্রমরকৃষ্ণগুম্ফশ্মশ্রুশোভিত সুন্দর মুখমণ্ডল অপূর্ব্বশোভা পাইল। তৎকালে তাঁহাকে দেখিয়া মোগলজাতীয় যুবা পুরুষ বলিয়া বোধ হইতে লাগিল।
ভবানন্দ এইরূপে মোগল সাজিয়া, সশস্ত্র হইয়া মঠ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। সেখান হইতে ক্রোশেক দূরে দুইটী অতি অনুচ্চ পাহাড় ছিল। সেই পাহাড়ের উপর জঙ্গল উঠিয়াছে। সেই দুইটী পাহাড়ের মধ্যে একটী নিভৃত স্থান ছিল। তথায় অনেকগুলি অশ্ব রক্ষিত হইয়াছিল। মঠবাসীদিগের অশ্বশালা এইখানে। ভবানন্দ তাহার মধ্য হইতে একটী অশ্ব উন্মোচন করিয়া, তৎপৃষ্ঠে আরোহণপূর্ব্বক নগরাভিমুখে ধাবমান হইলেন।
যাইতে যাইতে সহসা তাঁহার গতি রোধ হইল। সেই পথিপার্শ্বে কলনাদিনী তরঙ্গিণীর কূলে, গগনভ্রষ্ট নক্ষত্রের ন্যায়, কাদম্বিনীচ্যুত বিদ্যুতের ন্যায়, দীপ্ত স্ত্রীমূর্ত্তি শয়ান দেখিলেন। দেখিলেন, জীবনলক্ষণ কিছু নাই—শূন্য বিষের কৌটা পড়িয়া আছে। ভবানন্দ বিস্মিত, ক্ষুব্ধ, ভীত হইলেন। জীবানন্দের ন্যায়, ভবানন্দও মহেন্দ্রের স্ত্রীকন্যাকে দেখেন নাই। জীবানন্দ যে সকল কারণে