ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন কল্যাণি, শারীরিক-মঙ্গল ত?”
কল্যাণী। এ প্রশ্ন কি আপনি ত্যাগ করিবেন না? আমার শারীরিক মঙ্গলে আপনারই কি ইষ্ট, আর আমারই বা কি ইষ্ট?
ভব। যে বৃক্ষ রোপণ করে, সে তাহাতে নিত্য জল দেয়। গাছ বাড়িলেই তাহার সুখ। তোমার মৃত দেহে আমি জীবন রোপণ করিয়াছিলাম, বাড়িতেছে কি না, জিজ্ঞাসা করিব না কেন?
ক। বিষবৃক্ষের কি ক্ষয় আছে?
ভব। জীবন কি বিষ?
ক। না হলে অমৃত ঢালিয়া আমি তাহা ধ্বংস করিতে চাহিয়াছিলাম কেন?
ভব। সে অনেক দিন জিজ্ঞাসা করিব মনে ছিল, সাহস করিয়া জিজ্ঞাসা করিতে পারি নাই। কে তোমার জীবন বিষময় করিয়াছিল?
কল্যাণী স্থিরভাবে উত্তর করিলেন, “আমার জীবন কেহ বিষময় করে নাই। জীবনই বিষময়। আমার জীবন বিষময়, আপনার জীবন বিষময়, সকলের জীবন বিষময়।”
ভব। সত্য কল্যাণি, আমার জীবন বিষময়। যে দিন অবধি— তোমার ব্যাকরণ শেষ হইয়াছে?
ক। না।
ভব। অভিধান?
ক। ভাল লাগে না।
ভব। বিদ্যা অর্জ্জনে কিছু আগ্রহ দেখিয়াছিলাম। এখন এ অশ্রদ্ধা কেন?
ক। আপনার মত পণ্ডিতও যখন মহাপাপিষ্ঠ, তখন লেখাপড়া না করাই ভাল। আমার স্বামীর সংবাদ কি প্রভু?
ভব। বার বার সে সংবাদ কেন জিজ্ঞাসা কর? তিনি ত তোমার পক্ষে মৃত।
ক। আমি তাঁর পক্ষে মৃত, তিনি আমার পক্ষে নন।
ভব। তিনি তোমার পক্ষে মৃতবৎ হইবেন বলিয়াই ত তুমি মরিলে। বার বার সে কথা কেন কল্যাণি?
ক। মরিলে কি সম্বন্ধ যায়? তিনি কেমন আছেন?
ভব। ভাল আছেন।