ভব। ক্ষতি কি—বল না।
ভবানন্দ তরবারি নিষ্কাশিত করিয়া ধীরানন্দের স্কন্ধে স্থাপিত করিলেন। ধীরানন্দ না পলায়।
ধীর। আমি এই বলিতেছিলাম;— তুমি কল্যাণীকে বিবাহ কর—
ভব। কল্যাণী, তাও জান?
ধীর। বিবাহ কর না কেন?
ভব। তাহার যে স্বামী আছে।
ধীর। বৈষ্ণবের সেরূপ বিবাহ হয়।
সে নেড়া বৈরাগীর—সন্তানের নহে। সন্তানের বিবাহই নাই।
ধীর। সন্তান-ধর্ম্ম কি অপরিহার্য্য— তোমার যে প্রাণ যায়। ছি! ছি! আমার কাঁধ যে কাটিয়া গেল! (বাস্তবিক এবার ধীরানন্দের স্কন্ধ হইতে রক্ত পড়িতেছিল।)
ভব। তুমি কি অভিপ্রায়ে আমাকে অধর্ম্মে মতি দিতে আসিয়াছ? অবশ্য তোমার কোন স্বার্থ আছে।
ধীর। তাহাও বলিবার ইচ্ছা আছে—তরবারি বসাইও না—বলিতেছি। এই সন্তানধর্ম্মে আমার হাড় জর জর হইয়াছে, আমি ইহা পরিত্যাগ করিয়া স্ত্রীপুত্রের মুখ দেখিয়া দিনপাত করিবার জন্য বড় উতলা হইয়াছি। আমি এ সন্তানধর্ম্ম পরিত্যাগ করিব। কিন্তু আমার কি বাড়ী গিয়া বসিবার যো আছে? বিদ্রোহী বলিয়া আমাকে অনেকে চিনে। ঘরে গিয়া বসিলেই হয় রাজপুরুষে মাথা কাটিয়া লইয়া যাইবে, নয় সন্তানেরাই বিশ্বাসঘাতী বলিয়া মারিয়া ফেলিয়া চলিয়া যাইবে। এই জন্য তোমাকে আমার পথে লইয়া যাইতে চাই।
ভব। কেন, আমায় কেন?
ধীর। সেইটি আসল কথা। এই সন্তানসেনা তোমার আজ্ঞাধীন—সত্যানন্দ এখন এখানে নাই, তুমি ইহার নায়ক। তুমি এই সেনা লইয়া যুদ্ধ কর, তোমার জয় হইবে, ইহা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। যুদ্ধ জয় হইলে তুমি কেন স্বনামে রাজ্য স্থাপন কর না, সেনা ত তোমার আজ্ঞাকারী। তুমি রাজা হও— কল্যাণী তোমার মন্দোদরী হউক, আমি তোমার অনুচর হইয়া স্ত্রীপুত্ত্রের মুখাবলোকন করিয়া দিনপাত করি, আর আশীর্ব্বাদ করি। সন্তানধর্ম্ম অতল জলে ডুবাইয়া দাও।