এবার মহেন্দ্র বড় অপ্রতিভ হইলেন। বলিলেন, “কই, কিসে অবিশ্বাস করিলাম?”
ন। নহিলে আমার পিছু পিছু অন্তঃপুরে আসিয়া উপস্থিত কেন?
ম। কল্যাণীর সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল; তাই আসিয়াছি।
ন। তবে এখন যান। কল্যাণীর সঙ্গে আমারও কিছু কথা আছে। আপনি সরিয়া যান, আমি আগে কথা কই। আপনার ঘর বাড়ী, আপনি সর্ব্বদা আসিতে পারেন, আমি কষ্টে একবার আসিয়াছি।
মহেন্দ্র বোকা হইয়া রহিলেন। কিছুই বুঝিতে পারিতেছেন না। এ সকল কথা ত অপরাধীর কথাবার্ত্তার মত নহে। কল্যাণীরও ভাব বিচিত্র। সেও ত অবিশ্বাসিনীর মত পলাইল না, ভীতা হইল না, লজ্জিতা নহে—কিছুই না, বরং মৃদু মৃদু হাসিতেছে। কল্যাণী—যে সেই বৃক্ষতলে অনায়াসে বিষ ভোজন করিয়াছিল—সে কি অপরাধিনী হইতে পারে? মহেন্দ্র এই সকল ভাবিতেছেন, এমত সময়ে অভাগিনী শান্তি, মহেন্দ্রের দুরবস্থা দেখিয়া ঈষৎ হাসিয়া কল্যাণীর প্রতি এক বিলোল কটাক্ষ নিক্ষেপ করিল। সহসা তখন অন্ধকার ঘুচিল—মহেন্দ্র দেখিলেন, এ যে রমণীকটাক্ষ। সাহসে ভর করিয়া, নবীনানন্দের দাড়ি ধরিয়া মহেন্দ্র এক টান দিলেন—কৃত্রিম দাড়ি গোঁপ খসিয়া আসিল। সেই সময়ে অবসর পাইয়া, কল্যাণী বাঘছালের গ্রন্থি খুলিয়া ফেলিল—বাঘছালও খসিয়া পড়িল। ধরা পড়িয়া শান্তি অবনতমুখী হইয়া রহিল।
মহেন্দ্র তখন শান্তিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে?”
শা। শ্রীমান্ নবীনানন্দ গোস্বামী।
ম। সে ত জুয়াচুরি; তুমি স্ত্রীলোক?
এখন কাজে কাজেই।
তবে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি—তুমি স্ত্রীলোক হইয়া সর্ব্বদা জীবানন্দ ঠাকুরের সহবাস কর কেন?
শা। সে কথা আপনাকে নাই বলিলাম।
ম। তুমি যে স্ত্রীলোক, জীবানন্দ ঠাকুর তা কি জানেন?
শা। জানেন।
শুনিয়া, বিশুদ্ধাত্মা মহেন্দ্র অতিশয় বিষণ্ণ হইলেন। দেখিয়া কল্যাণী আর থাকিতে পারিল না; বলিল, “ইনি জীবানন্দ গোস্বামীর ধর্ম্মপত্নী শান্তিদেবী।”