চতুর্থ খণ্ড—পঞ্চম পরিচ্ছেদ
১২১
শান্তি। কাল এসেছি সায়েব।
সাহেব। ও লোক আজ নিকেল গিয়া হোগা।
শান্তি মনে মনে ভাবিতেছিল যে, “তোমার বাপের শ্রাদ্ধের চাল যদি আমি না চড়াই, তবে আমার রসকলি কাটাই বৃথা। কতক্ষণে শিয়ালে তোমার মুণ্ড খাবে আমি দেখ্বো।” প্রকাশ্যে বলিল, “তা সাহেব, হতে পারে, আজ বেরিয়ে গেলে যেতে পারে। অত খবর আমি জানি না, বৈষ্ণবী মানুষ, গান গেয়ে ভিক্ষা শিক্ষা করে খাই, অত খবর রাখি নে। বকে বকে গলা শুকিয়ে উঠ্লো, পয়সাটা সিকেটা দাও—উঠে চলে যাই। আর ভাল করে বক্শিশ দাও ত না হয় পরশু এসে বলে যাব।”
সাহেব ঝনাৎ করিয়া একটা নগদ টাকা ফেলিয়া দিয়া বলিল, “পরশু নেহি বিবি!”
শান্তি বলিল, “দূর বেটা! বৈষ্ণবী বল্, বিবি কি?”
এডওয়ার্ডস্। পরশু নেহি, আজ রাৎকো হাম্কো খবর মিল্না চাহিয়ে।
শান্তি। বন্দুক মাথায় দিয়ে সরাপ টেনে সরষের তেল নাকে দিয়ে ঘুমো। আজ আমি দশ কোশ রাস্তা যাব—আস্বো—ওঁকে খবর এনে দেব! ছুঁচো বেটা কোথাকার।
এড্। ছুঁচো ব্যাটা কেস্কা কয়তা হ্যায়?
শান্তি। যে বড় বীর—ভারি জাঁদ্রেল।
এড্। Great General হাম হো শক্তা হ্যায়—ক্লাইবকা মাফিক। লেকেন আজ হাম্কো খবর মিল্নে চাহিয়ে। শও রূপেয়া বখসিস্ দেঙ্গে।
শান্তি। শই দাও আর হাজার দাও, বিশ ক্রোশ এ দুখানা ঠেঙ্গে হবে না।
এড্। ঘোড়ে পর।
শান্তি। ঘোড়ায় চড়্তে জান্লে আর তোমার তাঁবুতে এসে সারেঙ্গ বাজিয়ে ভিক্ষে করি?
এড্। গদী পর লে যায়েগা।
শান্তি। কোলে বসিয়ে নিয়ে যাবে? আমার লজ্জা নাই?
এড্। ক্যা মুস্কিল, পান্শো রূপেয়া দেঙ্গে।
শান্তি। কে যাবে, তুমি নিজে যাবে?
সাহেব তখন অঙ্গুলিনির্দ্দেশপূর্ব্বক সম্মুখে দণ্ডায়মান লিণ্ড্লে নামক এক জন যুবা এন্সাইনকে দেখাইয়া তাহাকে বলিলেন, “লিণ্ড্লে, তুমি যাবে?” লিণ্ড্লে শান্তির রূপযৌবন দেখিয়া বলিল, “আহ্লাদপূর্ব্বক।”