ভূমিকা
বঙ্কিমচন্দ্র নিজে লিখিয়া গিয়াছেন, “দুর্গেশনন্দিনী বা চন্দ্রশেখর বা সীতারামকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যাইতে পারে না। পাঠক মহাশয় অনুগ্রহপূর্ব্বক আনন্দমঠ বা দেবী চৌধুরাণীকে ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’ বিবেচনা না করিলে বড়ই বাধিত হইব। এই রাজসিংহ প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিলাম।”
এই কথাগুলিতে তাঁহার অভিপ্রায় কি? ঐতিহাসিক উপন্যাস বলিতে আমরা কি বুঝিব? তাহাতে কি কি উপাদান থাকা চাই? এ বিষয়ে পণ্ডিতেরা একমত হইতে পারেন নাই। অল্প দিন হইল, গত ২৫ ডিসেম্বরের বিলাতী ‘টাইম্স্’ পত্রিকায় পড়িলাম:—
“It is not easy to define a historical novel. Professor Nield's definition, ‘A novel is rendered historical by the introduction of dates, personages or events to which identification can be given,’ seems too severe....Scribner's [of New York] have, justifiably, interpreted the subject more liberally by the inclusion of novels the background of which is laid in a recognizable historical period, even though no single character in the book may have a genuine historical prototype.”
এই দ্বিতীয় কথাটি যদি আমরা স্বীকার করি, তবে ‘দুর্গেশনন্দিনী’ হইতে ‘সীতারাম' পর্য্যন্ত ঐ শ্রেণীর উপন্যাস সাতখানিকে নিশ্চয়ই ঐতিহাসিক উপন্যাস নাম দিতে হয়। তাহাদের কোনটায় কল্পিত চরিত্র বেশী, কোনটায় ইতিহাসে পরিচিত চরিত্র বেশী (যেমন ‘রাজসিংহে’), কিন্তু সবগুলিতেই সেই অতীত যুগের সমাজের, ঘর-বাড়ীর, মানবচিন্তার, আচার-ব্যবহারের অনেকাংশে সত্য চিত্র প্রতিবিম্বিত হইয়াছে। কিন্তু এগুলিতে পদে পদে খাঁটি ঐতিহাসিক সত্য রক্ষা করা হয় নাই, কারণ এরূপ সত্যের চিত্রের উপর বঙ্কিম ইচ্ছা করিয়া এক 'অলোক আলোকের' রং ফলাইয়া দিয়াছেন, তাহার কথা পরে বলিব।
বঙ্কিম নিজে এই শ্রেণীর সাহিত্যকে একটি বড়ই সঙ্কীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ করিয়াছিলেন। বোধ হয়, (তাঁহার বিশ্বাস এইরূপ ছিল যে, ইতিহাসের সত্য ঘটনা মাত্র উপন্যাসের ভাষায় বিবৃত করিলে তবেই তাহা ঐতিহাসিক উপন্যাস নামের যোগ্য; অর্থাৎ তাহাতে অধিকাংশ পুরুষগুলি ইতিহাসে পরিচিত ব্যক্তি হইবে, এবং অতি কম সংখ্যায়