সত্য। বৎসে, তোমার অভীষ্ট সিদ্ধ হউক। তোমার সকল অপরাধ মার্জ্জনা করিলাম। তুমি সম্ভানমধ্যে পরিগণিত হইলে। আমি এতক্ষণ তোমার মর্ম্ম বুঝি নাই, তাই তিরস্কার করিতেছিলাম? আমি কি বুঝিব? বনচারী ব্রহ্মচারী বৈ ত নই। স্ত্রীলোকের তুল্য হইব কি প্রকারে? জীবানন্দ মরিবে, আমিও রাখিতে পারিব না, তুমিও রাখিতে পারিবে না। জীবানন্দ আমার প্রাণাধিক প্রিয়, কিন্তু দেখ দক্ষিণ হস্ত গেলে দেবতার কার্য্য করিতে পারিব না। যত দিন পার, জীবানন্দকে পৃথিবীতে রাখিও। সঙ্গে সঙ্গে আপনার ব্রহ্মচর্য্যা রাখিও। তুমি আমার প্রিয় শিষ্য হইলে। সন্তান মাত্রই আমার আনন্দ। এই জন্য সন্তানেরা সকলে আনন্দ নাম ধারণ করে। এ আনন্দমঠ। তুমিও আনন্দ নাম ধারণ কর। তোমার নাম নবীনানন্দই রহিল।
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৩, ১৭শ পংক্তির “বুড়ো বয়সে ছেলে মানুষকে” কথাগুলি ১ম সংস্করণে নাই।
দ্বিতীয় খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৫, ৬ষ্ঠ পংক্তির “প্রদীপটি উজ্জ্বল করিয়া” হইতে পৃ. ৭৬-এর শেষ “শয়ন করিলেন।”— এই অংশের পরিবর্ত্তে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নিম্নোদ্ধৃত অংশটি ছিল—
তদুপরি শয়ন করিল।
কিছুক্ষণ পরে জীবানন্দ ঠাকুর প্রত্যাগত হইলেন। হরিণ চর্ম্মের উপর একটা মানুষ শুইয়া আছে, ক্ষীণ প্রদীপালোকে অতটা ঠাওর হইল না। জীবানন্দ তাহারই উপর উপবেশন করিতে গেলেন। উপবেশন করিতে গিয়া শান্তির হাঁটুর উপর বসিলেন। হাঁটু অকস্মাৎ উঁচু হইয়া জীবানন্দকে ফেলিয়া দিল।
জীবানন্দের একটু লাগিল। জীবানন্দ উঠিয়া একটু ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, “কে হে তুমি বেল্লিক?”
শান্তি। আমি বেল্লিক না, তুমি বেল্লিক। মানুষের হাঁটুর উপর কি বসবার জায়গা?
জীব। তা কে জানে যে তুমি আমার ঘরে চুরি করিয়া এসে শুইয়া আছ?
শান্তি। তোমার ঘর কিসের?
জীব। কার ঘর?
শান্তি। আমার ঘর।
জীব। মন্দ নয়, কে হে তুমি?
শান্তি। তোমার বোনাই।
জীব। তুমি আমার হও না হও, আমি তোমার বোধ হইতেছে। তোমার গলার সঙ্গে আমার ব্রাহ্মণীর গলার একটু সাদৃশ্য আছে।
শান্তি। বহুদিন তোমার ব্রাহ্মণীর সঙ্গে আমার একাত্মভাব ছিল, সেই জন্য বোধ হয় গলার আওয়াজ একরকম হয়ে গেছে।