জীব। তোর যে বড় জোের জোর কথা দেখ্তে পাই? মঠের ভিতর না হতো তো এক ঘুষোয় দাঁতগুলো ভেঙ্গে দিতুম।
শান্তি। দাঁত ভেঙ্গেছে অনেক সাঙাত। কাল রাজনগরে কটা দাঁত ভেঙ্গেছিলে, হিসাব দাও দেখি। বড়াইয়ে কাজ নেই, আমি এখানে ঘুমুই। তোমরা সন্তানের দল, লেজ গুটিয়ে, বামুনঠাকুরুণদের আঁচলের ভিতর নুকোওগে।
এখন জীবানন্দ ঠাকুর কিছু ফাঁপরে পড়িলেন। মঠের ভিতর সন্তানে সন্তানে মারামারি করা সত্যানন্দের নিষেধ। কিন্তু এরও বড় মুখের দৌড়, দুঘা না দিলেও নয়। রাগে সর্ব্বশরীর জ্বলিতে লাগিল। অথচ গলার আওয়াজটা মধ্যে মধ্যে বড় মিঠে লাগিতেছে, যেন কি মনে হয়, যেন কে স্বর্গের দ্বার খুলিয়া ডাকিতেছে, আর বলিতেছে এলেই ঠ্যাঙে লাঠী মার্বো। জীবানন্দের উঠিতেও ইচ্ছা করিতেছিল না, বসিতেও পারেন না। ফাঁপরে পড়িয়া বলিলেন,
“মহাশয় এ ঘর আমার, চিরকাল ভোগ দখল করিতেছি, আপনি বাহিরে যান।”
শান্তি। এ ঘর আমার, অর্দ্ধ দণ্ড ভোগ দখল করিতেছি। আপনি বাহিরে যান।
জীব। মঠের ভিতরে মারামারি করিতে নাই বলিয়াই লাথি মারিয়া তোমায় নরককুণ্ডে ফেলিয়া দিই নাই, কিন্তু এখনি মহারাজের অনুমতি আনিয়া তোমায় তাড়াইয়া দিতে পারি।
শান্তি। আমি মহারাজের অনুমতি আনিয়াই তোমায় তাড়াইয়া দিতেছি। তুমি দূর হও।
জীব। তাহা হইলে এ ঘর তোমার। মহারাজকে কেবল জিজ্ঞাসা করিয়া আসিতেছি; আগে বল তোমার নাম কি?
শান্তি। আমার নাম নবীনানন্দ গোস্বামী, তোমার নাম কি?
জীব। আমার নাম জীবানন্দ গোস্বামী।
শান্তি। তুমিই জীবানন্দ গোস্বামী! তাই এমন?
জীব। তাই কেমন!
শান্তি। লোকে বলে, আমি কি কর্বো।
জীব। লোকে কি বলে?
শান্তি। তা আমার বল্তে ভয়ই কি? লোকে বলে জীবানন্দ ঠাকুর বড় গণ্ডমূর্খ।
জীব। গণ্ডমূর্খ, আর কি বলে?
শান্তি। মোটা বুদ্ধি।
জীব। আর কি বলে?
শান্তি। যুদ্ধে কাপুরুষ।
জীবানন্দের সর্ব্ব শরীর রাগে গর গর করিতে লাগিল, বলিলেন, “আর কিছু আছে?”
শান্তি। আছে অনেক কথা—নিমাই ব’লে আপনার একটি ভগিনী আছে।
জীব। তুমি বড় বেল্লিক হে—