৷৴৹
ভিন্সেণ্ট স্মিথ (নিতান্ত নেটিভ-প্রেমী নহেন) লিখিতেছেন—“The revenue affairs were solely in charge of Md. Raza Khan, who did not worry sbout the sufferings of the people. He collected the revenue almost in full and added 10 per cent for 1771.”—(Oxford History, p. 508.)
ভারতে মুসলমান-শাসনের সেই অবনতির যুগে রাজকর্ম্মচারীদের অসহ্য অত্যাচারের ফলে হিন্দু প্রজারা ক্ষেপিয়া বিদ্রোহী ও দলবদ্ধ হইয়া উঠিল, এটা ঐতিহাসিক সত্য। বিখ্যাত লেখক সৈয়দ ঘুলাম হুসেন তবাতবাই (সিয়র্-উল্-মুতাখ্খরীন-রচয়িতা) তাঁহার সেই সর্ব্বজন-আদৃত ইতিহাসে ইহার আর একটি দৃষ্টান্ত দিয়াছেন; তিনি লিখিয়াছেন— “আজ্ আহদ্-ই মুইন্-উল্-মুল্ক্” হইতে “বহম্ রসীদ্” পর্য্যন্ত (ঐ মূল ফারসী গ্রন্থ, ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে মুদ্রিত আদি সংস্করণ, ৩য় ভাগ, ৫০-৫১ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য); অর্থাৎ “মুইন্-উল্-মুল্ক্ (পঞ্জাবের সুবাদার)এর সময় হইতে...এই সুবাগুলির আয়ে ব্যয় পোষাইত না। সে জন্য প্রজাদের উপর অত্যাচার চলিতে লাগিল। তাহারা দুর্ব্বল, কোন আশ্রয় বা পলাইবার স্থান পাইল না। শিখ সম্প্রদায় মধ্যে পরস্পরকে সাহায্য করা কর্ত্তব্য— এমন কি, ধর্ম্মের অংশ বলিয়া গণ্য হইত। সুতরাং যেখানেই অত্যাচার হইত, সেই বাড়ীর লোক মাথার চুল লম্বা রাখিয়া, ‘[শ্রী] অকাল, অকাল!’ এই রব করিয়া গুরুগোবিন্দের পন্থ গ্রহণ করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিত, এবং অপর শিখগণ তাহাদের সমর্থন করিতে প্রবৃত্ত হইত।”
ঠিক সেই কারণে, সেই শতাব্দীতে, বাঙ্গলায়ও জোট বাঁধিয়া “সন্তানেরা” বিদ্রোহী হয়, ইহা বঙ্কিম দেখাইয়াছেন।
সত্য বটে, লোক তারিখ ও ঘটনার খুঁটিনাটি দেখিতে গেলে তাঁহার এই শ্রেণীর উপন্যাসে অনেক অভাব অনেক স্বকপোলকল্পনা ধরা পড়িবে, এমন কি বর্ত্তমান সময়ে চলিত স্কুলপাঠ্য ইতিহাস হইতেও এগুলি অনেক স্থলে ভুল বা ফাঁকা ফাঁকা বলিয়া মনে হইবে। কিন্তু ইহাতে আছে মানুষের জীবন্ত ছবি। বঙ্কিমের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় সেই অতীত ভারতের স্থলে স্থলে কল্পিত ব্যক্তিগণ নিজ প্রকৃত চরিত্র দেখাইয়া আমাদের নিকট অতি ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হইতেছেন; আমরা সেই সেই যুগের ভারতের গ্রাম-নগর, নর-নারী, অবিস্মরণীয় কোন কোন মহাপুরুষদের চাক্ষুষ সাক্ষাৎ পাইতেছি; তাঁহাদের এবং তাঁহাদের সময়কে নিজ পাড়াপ্রতিবাসীর, নিজ ঘরের লোকের মত চিনিতে পারিতেছি। তাঁহার এই উপন্যাস কয়টিতে ইতিহাস হইতে জানা পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং নিখুঁত সব সত্য নাই কেন?