পাতা:আনন্দমঠ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম খণ্ড—দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
৩৭

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।
গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে।”

 কল্যাণীর তখন বিষ ধরিয়া আসিতেছিল, চেতনা কিছু অপহৃত হইতেছিল; তিনি মোহভরে শুনিলেন, যেন সেই বৈকুণ্ঠে শ্রুত অপূর্ব্ব বংশীধ্বনিতে বাজিতেছে:—

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে
গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে।”

 তখন কল্যাণী অপ্সরোনিন্দিত কণ্ঠে মোহভরে ডাকিতে লাগিলেন,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 মহেন্দ্রকে বলিলেন, “বল,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 কানননির্গত মধুর স্বর আর কল্যাণীর মধুর স্বরে বিমুগ্ধ হইয়া কাতরচিত্তে ঈশ্বর মাত্র সহায় মনে করিয়া মহেন্দ্রও ডাকিলেন,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 তখন চারি দিক্‌ হইতে ধ্বনি হইতে লাগিল,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 তখন যেন গাছের পাখীরাও বলিতে লাগিল,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 নদীর কলকলেও যেন শব্দ হইতে লাগিল,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 তখন মহেন্দ্র শোকপ ভুলিয়া গেলেন—উন্মত্ত হইয়া কল্যাণীর সহিত একতানে ডাকিতে লাগিলেন,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 কানন হইতেও যেন তাহাদের সঙ্গে একতানে শব্দ হইতে লাগিল,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”

 কল্যাণীর কণ্ঠ ক্রমে ক্ষীণ হইয়া আসিতে লাগিল, তবু ডাকিতেছেন,

“হরে মুরারে মধুকৈটভারে।”