পাতা:আনন্দমঠ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম খণ্ড—চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
৪১

 মহেন্দ্র বিস্মিত হইলেন, বড় বিশ্বাস করিলেন না; বলিলেন, “আপনি কি প্রকারে জানিলেন? আপনি ত বরাবর আমার সঙ্গে।”

 সত্য। আমরা মহাব্রতে দীক্ষিত। দেবতা অমাদিগের প্রতি দয়া করেন। আজি রাত্রেই তুমি এ সংবাদ পাইবে, আজি রাত্রেই তুমি কারাগার হইতে মুক্ত হইবে।

 মহেন্দ্র কোন কথা কহিলেন না। সত্যানন্দ বুঝিলেন যে, মহেন্দ্র বিশ্বাস করিতেছেন না। তখন সত্যানন্দ বলিলেন, “বিশ্বাস করিতেছ না—পরীক্ষা করিয়া দেখ।” এই বলিয়া সত্যানন্দ কারাগারের দ্বার পর্যন্ত আসিলেন। কি করিলেন, অন্ধকারে মহেন্দ্র কিছু দেখিতে পাইলেন না। কিন্তু কাহারও সঙ্গে কথা কহিলেন, ইহা বুঝিলেন। ফিরিয়া আসিলে, মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি পরীক্ষা?”

 সত্য। তুমি এখনই কারাগার হইতে মুক্তিলাভ করিবে।

 এই কথা বলিতে বলিতে কারাগারের দ্বার উদঘাটিত হইল। এক ব্যক্তি ঘরের ভিতর আসিয়া বলিল,

 “মহেন্দ্র সিংহ কাহার নাম?”

 মহেন্দ্র বলিলেন, “আমার নাম।”

 আগন্তুক বলিল, “তোমার খালাসের হুকুম হইয়াছে—যাইতে পার।”

 মহেন্দ্র প্রথমে বিস্মিত হইলেন—পরে মনে করিলেন মিথ্যা কথা। পরীক্ষার্থ বাহির হইলেন। কেহ তাহার গতিরোধ করিল না। মহেন্দ্র ৰাজপথ পর্য্যন্ত চলিয়া গেলেন।

 এই অবসরে আগন্তুক সত্যানন্দকে বলিল, “মহারাজ! আপনিও কেন যান না? আমি আপনারই জন্য আসিয়াছি।”

 সত্য। তুমি কে? ধীরানন্দ গোঁসাই?

 ধীর। আজ্ঞে হাঁ।

 সত্য। প্রহরী হইলে কি প্রকারে?

 ধীর। ভবান আমাকে পাঠাইয়াছেন। আমি নগরে আসিয়া আপনারা এই কারাগারে আছেন শুনিয়া এখানে কিছু ধুতুরামিশান সিদ্ধি লইয়া আসিয়াছিলাম। যে খাঁ সাহেব পাহারায় ছিলেন, তিনি তাহা সেবন করিয়া ভূমিশয্যায় নিদ্রিত আছেন। এই জামা জোড়া পাগড়ি বর্শা যাহা আমি পরিয়া আছি, সে ভঁহারই।

 সত্য। তুমি উহা পরিয়া নগর হইতে বাহির হইয়া যাও। আমি এরূপে যাই না।