শান্তি। তিনি না হয় আর একটা ঘর খুঁজে নিন্।
গোব। তা কি হয়? যিনি এ ঘরে আছেন, তিনি কর্ত্তা বললেই হয়, যা করেন। তাই হয়।
শান্তি। আচ্ছা তুমি যাও, আমি স্থান না পাই, গাছতলায় থাকিব।
এই বলিয়া গোবর্দ্ধনকে বিদায় দিয়া শান্তি সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল। প্রবেশ করিয়া জীবানন্দের অধিকৃত কৃষ্ণাজিন বিস্তারণ পূর্ব্বক, প্রদীপটি উজ্জল করিয়া লইয়া, জীবানন্দের একখানি পুথি লইয়া পড়িতে আরম্ভ করিলেন।
কিছুক্ষণ পরে জীবানন্দ আসিয়া উপস্থিত হইলেন। শান্তির পুরুষবেশ, তথাপি দেখিবামাত্র জীবানন্দ তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন। বলিলেন, “এ কি এ? শান্তি?”
শান্তি ধীরে ধীরে পুথিখানি রাখিয়া, জীবানন্দের মুখপানে চাহিয়া বলিল,
“শান্তি কে মহাশয়?”
জীবানন্দ অবাক্—শেষ বলিলেন, “শান্তি কে মহাশয়? কেন, তুমি শান্তি নও?”
শান্তি ঘৃণার সহিত বলিল, “আমি নবীনানন্দ গোস্বামী।” এই কথা বলিয়া সে আবার পুথি পড়িতে মন দিল।
জীবানন্দ উচ্চ হাস্য করিলেন; বলিলেন, “এ নূতন রঙ্গ বটে। তার পর নবীনানন্দ, এখানে কি মনে ক’রে এসেছ?”
শান্তি বলিল, “ভদ্রলোকের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত আছে যে, প্রথম আলাপে ‘আপনি’ ‘মহাশয়’ ইত্যাদি সম্বোধন করিতে হয়। আমিও আপনাকে অসম্মান করিয়া কথা কহিতেছি না,—তবে আপনি কেন আমাকে তুমি তুমি করিতেছেন?”
“যে আজ্ঞে” বলিয়া জীবানন্দ গলায় কাপড় দিয়া যোড়হাত করিয়া বলিল, “এক্ষণে বিনীতভাবে ভৃত্যের নিবেদন, কি জন্য ভরুইপুর হইতে, এ দীনভবনে মহাশয়ের শুভাগমন হইয়াছে, আজ্ঞা করুন।”
শান্তি অতি গম্ভীরভাবে বলিল, “ব্যঙ্গেরও প্রয়োজন দেখিতেছি না। ভরুইপুর আমি চিনি না। আমি সম্ভানধর্ম্ম গ্রহণ করিতে আসিয়া, আজ দীক্ষিত হইয়াছি।”
জী। আ সর্ব্বনাশ! সত্য না কি?
শা। সর্ব্বনাশ কেন? আপনিও দীক্ষিত।
জী। তুমি যে স্ত্রীলোক!
শা। সে কি? এমন কথা কোথা পাইলেন?