পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বটেশ্বরের অবদান
৩৩

টেশ্বর সিকদার প্রতিশ্রুতি পালন করলেন, তাঁর গল্প ‘কে থাকে কে যায়’ মিলনান্তরূপেই সমাপ্ত হল। কিন্তু আট মাস হতে চলল, কদম্বানিলার দেখা নেই কেন? তার ঠিকানাটাও জানেন না যে চিঠি লিখে খবর দেবেন।

 সকাল বেলা বটেশ্বর তাঁর নীচের ঘরে বসে নিবিষ্ট হয়ে একটি নূতন গল্প লিখছেন—‘মন নিয়ে ছিনিমিনি।’ সহসা একটা চেনা গলার আওয়াজ তাঁর কানে এল—আসতে পারি সিকদার মশাই?

 ডাক্তার সঞ্জীব চাটুজ্যে ঘরে প্রবেশ করলেন, তাঁর পিছনে প্রিয়ব্রত রায় এবং একটি অচেনা মেয়ে। সঞ্জীব ডাক্তার বললেন, গুড মর্নিং সার। ওঃ আপনার সেই গল্পটিকে একেবারে মহত্তম অবদান বানিয়েছেন মশাই! একে নিশ্চয় চিনতে পেরেছেন— প্রিয়ব্রত রায়, যাকে আপনি পাগল বলে হাঁকিয়ে দিয়েছিলেন। আর এই দেখুন আপনার অলকা, আপনি যার প্রাণরক্ষা করেছেন।

 বটেশ্বরকে প্রণাম করে তাঁর পায়ের কাছে অলকা একটি পাতলা কাগজে মোড়া বড় কৌটো রাখল। সঞ্জীব ডাক্তার বললেন, আপনার জন্যে অলকা নিজের হাতে ছানার মালপো করে এনেছে, খাবেন সার।

 হতভম্ব হয়ে বটেশ্বর বললেন, কিছুই তো বুঝতে পারছি না!

 —এটা হল আপনার গল্পের সত্যিকার উপসংহার। বুঝিয়ে দিচ্ছি শুনুন।—এই অলকা হচ্ছে প্রিয়ব্রতর স্ত্রী, আমার শালী—মানে আমার স্ত্রীর মাসতুতো বোন। অলকা বছর খানিক স্যানিটেরিয়মে ছিল, বেশ সেরেও উঠেছিল, কুক্ষণে এর হাতে এল প্রগামিণী পত্রিকা। আপনার গল্প পড়তে পড়তে এর মাথায় এক বেয়াড়া ধারণা এল— গল্পের অলকা যদি বাঁচে তবেই আমি বাঁচব, সে যদি মরে তবে আমিও মরব। আমরা অনেক বোঝালুম, ওসব রাবিশ গল্প পড়ে মাথা খারাপ ক’রো না, তুমি তো সেরেই উঠছ। কিন্তু অলকার বদখেয়াল কিছুতেই