পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কামরূপিণী
৬৭

পঁচিশ বৎসর আগেকার কথা। বলভদ্র মর্দরাজকে তোমরা চিনবে না, তার বাপ রামভদ্র মর্দরাজ বালেশ্বর জেলার একজন বড় জমিদার ছিলেন, রাজা বললেই হয়। তাঁর এস্টেটে আমি তখন কাজ করতুম। বলভদ্রর বয়স ত্রিশের নীচে, সু-পুরুষ, মেজাজ ভাল, শিকারের খুব শখ। একদিন সে আমাকে বলল, ও শীতলবাবু কেবলই সেরেস্তার কাজ নিয়ে থাকলে তোমার মাথা বিগড়ে যাবে। বাবাকে বলে তোমার বিশ দিনের ছুটি মঞ্জুর করিয়ে দিচ্ছি, আমার সঙ্গে কিমাপুর চল, উত্তরপূর্ব আসামে, খাসা জায়গা, দেদার শিকার। সেখানে আঠারো-শিঙা হরিণ পাওয়া যায়, আকারে খুব বড় নয়, কিন্তু শিঙ দুটো অতি অদ্ভুত, প্রত্যেকটার নটা ফেঁকড়া।

 সব খরচ বলভদ্র যোগাবে, আমার কাজ হবে শুধু মোসাহেবি, সতেরাং রাজী হলুম। কিমাপুর জায়গাটা একটু দুর্গম, ব্রহ্মপুত্রর ওপারে ভুটান রাজ্যের লাগাও, তবে কামরূপ জেলাতেই পড়ে। পথ ভাল নয়, কোনও রকমে মোটর চলে। শিকারী বলে বলভদ্রর খুব খ্যাতি ছিল, সহজেই আসাম গভর্নমেণ্টের কাছ থেকে সব রকম দরকারী পারমিট পেয়ে গেল। একটা বড় হডসন মোটর গাড়ি, অনেক খাবার জিনিস, ড্রাইভার, আর একজন চাকর নিয়ে আমরা কিমাপুর ডাকবাংলায় উঠলাম। রোজই শিকারের চেষ্টা হত, নানা রকম জানোয়ারও পাওয়া যেত, কিন্তু আঠারো-শিঙা হরিণের দেখা নেই। ওখানকার লোকরা বলল, আরও উত্তরে জঙ্গলের মধ্যে পাওয়া যাবে। খানিক দূর পর্যন্ত কোনও রকমে মোটর চলবে, তার পর হেঁটে যেতে হবে।

 সকাল আটটার সময় আমরা যাত্রা করলাম। গাড়িতে বলভদ্র, আমি, ড্রাইভার কিরপান সিং, আর তার পাশে একজন ভুটিয়া, সে পথ দেখাবে। রাস্তা অতি খারাপ, দু বার টায়ার পংচার হল, তিন মাইল যেতেই বেলা এগারোটা বাজল। গরম বেশ, খিদেও খুব পেয়েছে।