পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ অধ্যায়
৪৫

তিনি অতীব শান্তভাবে সমস্ত বিষয়ই সূক্ষ্মমরূপে পর্য্যবেক্ষণ করিয়াছিলেন। এখানে আসিবার পর নিত্য নূতন পদার্থের ও রীতিনীতির সন্দর্শন করিয়াও তিনি কখনও সেবিষয়ে প্রশ্ন-পূর্ব্বক আমাকে বিরক্ত করেন নাই। তাঁহার ব্যবহারে দোষারোপ করিবার কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না। তাঁহার কার্য্যকুশলতা, একাগ্রতা, সদাচার প্রভৃতি গুণ সকলেরই অনুকরণীয়।”

 আমেরিকায় পৌঁছিয়া আনন্দী বাঈ শ্রীমতী কার্পেণ্টারের সমভিব্যাহারে প্রথমে নিউজারসী নগরে তাহার গৃহে গমন করিলেন। তথায় তাঁহাকে চারি মাস অবস্থিতি করিতে হয়। সেখানে বাসকালে তিনি অল্পদিনের মধ্যেই কার্পেণ্টার পরিবারভুক্ত সকলেরই প্রীতিভাজন হইয়াছিলেন। বালক বালিকারা মুহূর্ত্তের জন্যও তাহাদিগের এই হিন্দু ভগিনীর সঙ্গ-ত্যাগ করিত না! প্রতিবেশিনীগণও তাঁহার নিতান্ত পক্ষপাতিনী হইয়াছিলেন। বিদেশে গিয়া উপহসিতা হইবার ভয়ে পরকীয় রীতিনীতির অবলম্বন দূরে থাকুক, স্বীয় ব্যবহার গুণে তিনি কার্পেণ্টার পরিবারে নানা বিষয়ে হিন্দু রীতিনীতির প্রবর্ত্তন করিয়াছিলেন। আনন্দী বাঈ কখনও নাম-গ্রহণ পূর্ব্বক শ্রীমতী কার্পেণ্টারকে আহ্বান করিতেন না। গুরুজনের নামোল্লেখ-সহকারে আহ্বানের রীতি পাশ্চাত্য দেশে সর্ব্বত্র প্রচলিত আছে; এমন কি, তথায় পুত্রও পিতার নামগ্রহণ পূর্ব্বক আহ্বান করিতে সঙ্কোচবোধ করেন না। কিন্তু আনন্দী বাঈর আচরণে শ্রীমতী কার্পেণ্টারের আত্মীয় স্বজনেরা এ বিষয়ে হিন্দু রীতির শ্রেষ্ঠত্ব বুঝিতে পারিলেন।