খেলনা কিনে উপহার দিলাম। মামার নিকট হতে উপহার পেয়ে তাদের বেশ আনন্দ হল। জংলী হাঁস এবং অন্যান্য কিছু আহার্য কিনে আনলাম।
লক্ষ্মীর সংগে আমাকে বাজারে দেখে অনেকেই কৌতুহলপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছিল। লক্ষ্মী তা বুঝতে পেরে ছেলে-মেয়ের কানে কি বলে দিলেন। লক্ষ্মীর ছেলে-মেয়ে মার কথা শুনে আমাকে পোস্ত ভাষায় মামা বলে ডাকছিল। পথের লোক অনেকেই আমার কথা ছেলেমেয়ে দুটিকে জিজ্ঞাসা করেছিল। ছেলেমেয়েরা বলেছিল “ইনি কলকাতার মামা।” এদের হাবভাব দেখে মনে হল, কলকাতার লোককে মামা বলে ডাকা অগৌরবের নয়।
বাড়ী ফিরে লক্ষ্মী রান্নার বন্দোবস্ত করলেন। রান্না করার ফাঁকে ফাঁকে তাঁর কুমারী, জীবনের কথা তিনি আমার কাছে বলে যাচ্ছিলেন। লক্ষ্মী নিজের কাহিনী যা বলেছিলেন তা এখানে বলছি। এই কাহিনীর পাত্রপাত্রীদের আসল নাম গোপন রেখে কাল্পনিক নামই ব্যবহার করব।
পূর্ববংগের কোন এক জেলায় লক্ষ্মীর পিত্রালয় ছিল। পিতা হরিশংকর রায় সদরে চাক্রি করতেন। হরিশংকরের মাইনে সামান্যই ছিল। সেজন্যই বোধ হয় স্ত্রীকে চাক্রি-স্থানে রাখতে সক্ষম হতেন না। স্ত্রী একা বাড়ীতই থাকতেন। যখনই হরিশংকর সুযোগ পেতেন তখনই বাড়ী এসে সংসার দেখাশুনা করতেন, তারপর আবার চলে যেতেন। তঁদের গ্রামের ব্রাহ্মণকুলোস্তব কালু পণ্ডিত লোক ভাল ছিলেন না। তিনি দরিদ্র হরিশংকরের স্ত্রীর নামে নানা কুৎসা প্রচার করছিলেন। কিছুদিন পর হরিশংকরের স্ত্রী গর্ভবতী হলেন। যথাসময়ে লক্ষ্মীর জন্ম হল। তখন কালু পণ্ডিত গ্রামে হৈ চৈ শুরু করলেন। দরিদ্র হরিশংকর ধনী ব্রাহ্মণ কালু পণ্ডিতের চক্রান্তে একঘরে হলেন। কালু পণ্ডিতের কাছে অনেকেই টাকা ধায় করত। সেজন্য ঋণগ্রস্তু গ্রামবাসী হরিশংকর প্রকৃতই দোষী কি না তার বিচার না করেই হরিশংকরকে সমাজচ্যুত করল।