হেট ব্যবহার করত। এসব ইউরোপীয়গণ সাধারণত কূট রাজনীতিক—কাজেই আসতেন। রাজার প্রাসাদে তাঁদের অবাধ যাতায়াত ছিল। দুটি সান্ত্রীও বোধ হয় আমাকে সেরূপ একজন কূট রাজনৈতিক ভেবেই পথ ছেড়ে দিয়েছিল।
দ্বিতীয় দরজাও তেমনি গম্ভীরভাবে পার হয়ে চলে গেলাম। দ্বিতীয় দরজার সান্ত্রী হয়তো ভেবেছিল প্রথম দরজায় ‘পাস’ দিয়ে এসেছি। তারপর একটি উঠান। এখান থেকে দুদিকে দুটো পথ প্রধান মন্ত্রীর খাস দরজা অবধি চলে গিয়েছে। ডানদিকের পথ ধরে ডান-বাঁ না তাকিয়ে সেক্রেটারীর দরজায় উপস্থিত হলাম। পথে চলার সময় লক্ষ্য করলাম, দোতলার একটা ঘরের তিনদিকের এবং তেতলার সবদিকের দেওয়ালই কাঁচের। তারপর লক্ষ্য করলাম, তেতলার ঘরটাতেই অনেক লোক বসে আছেন, অনেকে দাড়িয়েও আছেন।
সেক্রেটারী বেশ ভাল ইংলিশ জানতেন। তার সংগে ইংলিশেই কথা হ'ল। প্রধান মন্ত্রীর সংগে সাক্ষাৎ করতে এসেছি জানালে তিনি আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। আমি নামগোত্রহীন একজন ভবঘুরে বলায় তাঁর মুখে অবজ্ঞার ভাব ফুটে উঠল। তবুও ভদ্রলোকটি লোক ভাল, একথা বলতে হবেই। তিনি আমাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে জেনে আসতে গেলেন, আমার সংগে সাক্ষাৎ করতে প্রধান মন্ত্রী মহাশয়ের সময় হবে কি না। জানতাম, আমার মত অখ্যাত ব্যক্তিদের সংগে সাক্ষাৎ করার সময় কোন বড় লোকেরই হয় না। আমার মত লোক তাঁদের কাছে পোঁছুলেই তাঁদের কাজের হিড়িক লেগে যায়। ভাবছিলাম আমার কাছে যে পরিচয়-পত্রখানা আছে তা সেক্রেটারীর হাতে দেওয়া যায় কি না, এমনি সময় সেক্রেটারী এসে জানালেন, “প্রধান মন্ত্রীর সময়ের বড়ই অভাব, তিনি দুঃখের সহিত জানাচ্ছেন তার সংগে সাক্ষাৎ হবে না।” ভেবে দেখলাম অহমিকা বাজে কথা, কাজ করতে হবে। দেরী না করে, পকেট থেকে একখানা পরিচয়পত্র বের করে সেক্রেটারীর হাতে দিলাম এবং বললাম, “এখন একবার আপনি ওপরে যান, এখন হয়তো আমার সংগে সাক্ষাৎ করতে তাঁর সময় হতে পারে।”