পক্ষে ইজ্জতের ভয় করা মূর্খতা ছাড়া আর কি হতে পারে? আর কোন কথা না বলে একাই বের হয়ে পড়লাম।
চলছিলাম বৃটিশ কন্সালের বাড়ির দিকে। বৃটিশ কন্সালের সংগে আমার একটু দরকার ছিল। পথ বরফে ঢাকা। সাদা বরফের ওপর সূর্যের কিরণ পড়ায় চোখ ঝলসে যাচ্ছিল। চোখে রংগিন চসমা থাকায় বিশেষ কষ্ট হচ্ছিল না, কিন্তু খালি চোখে এরূপ অবস্থায় বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে অন্ধ হবার সম্ভাবনা থাকে। পাঠানরা অনেকেই সেজন্য পাগড়ির পিছনের ঝুলানো কাপড়টা দিয়ে চোখ ঢেকে পথ চলে।
বিদেশে যাবার পর বৃটিশ কনসালের সংগে দেখা-সাক্ষাৎ করতে আমার মোটেই ইচ্ছা হত না, কারণ প্রায় স্থলেই দেখা-সাক্ষাৎ করতে গিয়ে অপমানিত হতে হয়েছে। কিন্তু সোফিয়া, তেহরান, কোবি, সান্ফ্রান্সিস্কো এই কটি স্থানের বৃটিশ কন্সালগণ আমার সংগে আপন লোকের মতই ব্যবহার করেছিলেন। কেন যে তাঁরা আমার প্রতি সদয় ব্যবহার করেছিলেন তার কারণ আমার অজানা নয়। কারণ হ’ল তারা অন্তরে কমিউনিস্ট মনোবৃত্তিসম্পন্ন ছিলেন। দুনিয়ায় যারা কমিউনিস্ট মনোভাব পোষণ করে তাদের কারো দ্বারা আর আমি অপমানিত হই নি, নিগৃহীত জাতের লোক বলে তাদের কাছ থেকে বরং সহানুভূতিই পেয়েছি। চীনা বল, জাপানী বল, জার্মানী বল আর আমেরিকানই বল, যদি সে ন্যাশনেলিস্ট হয় তবে সে ভারতবাসীকে ভালবাসতে পারে না। সে মৌখিক ভালবাসা দেখাবে নিজের মতলব হাসিল করবার জন্য। সময় এবং সুযোগ পেলেই সর্বনাশ করবার চেষ্টা করবে। এটা ধ্রব সত্য।
চীন, জাপান এবং অন্যান্য পূর্বদেশ ভ্রমণ করে দেশে ফেরবার পর বুঝতে পেয়েছিলাম, লোকে জানে শুধু সাদা চামড়ার পূজা করতে। আমারই সামনে দু'হাত খুলে এদেশের ধনীরা দান করছে শুধু সাদা চামড়াওয়ালা পর্যটকদের।