কিন্তু আমি যখনই আমার দেশবাসীর কাছে উপস্থিত হয়েছি তখনই তার চেষ্টা করেছে আমার বিদ্যাবুদ্ধির পরিমাপ করতে, অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করবার চেষ্টাও যে কেউ কেউ করেনি তা নয়। কিন্তু আমি উপলব্ধি করেছিলাম, আমার দেশের ছাত্র-সমাজ দরিদ্র অথচ তাদেরই কাছে হাত পাততে হত। তারা যা দিত তাতে আমার পেট ভরত না, কিন্তু আধাপেটা খেয়েও আত্মতৃপ্তি লাভ করতাম। ছাত্র-সমাজের প্রতি আমার অন্তরের শুভকামনা স্বতঃই উৎসারিত হয়ে উঠত। চীনের ছাত্রছাত্রীরা আজ চীনকে বাঁচিয়ে রেখেছে সে দৃশ্য আমি দেখেছি। তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু ব্যক্তিগত উন্নতিসাধন নয়। দেশের স্বাধীনতা, দেশের সর্বাংগীন কল্যাণসাধনের আদর্শই তাদের উদ্বুদ্ধ করে তুলেছে।
ক্রমাগত বিফল মনোরথ হয়ে দিল্লীতে পৌছে ভেবেছিলাম আফগানিস্থানে গিয়ে হয়তো সাহায্য পাব না। আফগান জাত হয়তো পর্যটক কাকে বলে তাও জানে না। কিন্তু তা বলে আমার পর্যটন বন্ধ করি নি। এগিয়ে চলছিলাম।
কর্মত্যাগের পর আমার যা জমানো অর্থ ছিল, তা সবই ভারতীয় বেকারদের সাহায্যার্থে দিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভুলক্রমে একটি বেঙ্কে টাকা দান করতে ভুলে গিয়েছিলাম। সিংগাপুরে ফিরে আসবার পর বেঙ্ক-মেনেজার সংবাদপত্রে সিংগাপুরে ফিরে এসেছি সংবাদ পেয়ে আমাকে ডেকে পাঠান এবং আমার হিসাবে একুশ পাউণ্ড জমা আছে জানিয়ে দেন। এবার কিন্তু জমানো টাকা দান করতে ইচ্ছা হ’ল না; কারণ কেনেডা সরকার আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, পৃথিবীতে মনুষ্য-প্রীতি বলে কিছু নেই। কাজেই টাকা অপরিহার্য। সেই কথাটা 'প্রশান্ত মহাসাগরের অশান্তি’ নামক বইএ বলা হয়েছে। বেঙ্ক-মেনেজারকে জানিয়েছিলাম, গচ্ছিত টাকা যেন কাবুলের বৃটিশ কন্সালের কাছে পাঠিয়ে দেন। কাবুলের বৃটিশ কনসালকেও ঐ সংগেই লিখেছিলাম, তিনি যেন দয়া করে আমার টাকাগুলি কাবুলে না পৌঁছা পর্যন্ত তার কাছে জমা রাখেন। সেই টাকার সংবাদ নেবার জন্যই কন্সাল আফিসে চলছিলাম।