পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
আফগানিস্থান ভ্রমণ

 পর্যটক হয়ে নিজের দেশের গভর্নমেণ্টের কন‍্সাল্ অফিসে যাওয়াটা ভাল দেখায় না। সাধারণ লোক ভাবে, লোটা হয়ত পর্যটক নয়, একটা গুপ্তচর। যারা প্রকৃতই গোয়েন্দা তারা কন‍্সাল্ আফিসের সংগে সম্বন্ধ রাখে, কিন্তু বাইরে ভান করে তাদের সংগে কন‍্সালের কোন সম্পর্ক নেই। যে সরকারের পাসপোর্ট নিয়ে পথে বের হয়েছি সেই সরকারের বিরুদ্ধে যদি কিছু বলি, তাহলে অনেক সময় স্থানীয় লোক আমাকে গুপ্তচর বলেই মনে করবে। এসব কথা ভাল করেই জানতাম, কিন্তু নিজে খাঁটি থাকলে ভয়ের অথবা নতিস্বীকারের কোন কারণ থাকে না।

 কন‍্সাল্ অফিসে পৌছতে পাঁচটি চায়ের দোকানে চা খেয়ে শরীর গরম করতে হয়েছিল। কন‍্সালের বাড়ির কাছে একটা ফাঁকা মাঠ। সেটা পেরিয়ে কন‍্সালের দরজার সামনে এসেই দেখতে পেলাম দু’জন পাঞ্জাবী মুসলমান রৌদ্রে বসে আছে। এই ধরণে বসে থাকা রাজভক্ত প্রজার দ্বারাই সম্ভব। প্রচণ্ড শীতে আমার শরীরের রক্ত জমে যাচ্ছিল। তাড়াতাড়ি করে দরজায় আঘাত করলাম। দরজা খোলামাত্রই সোজা কন‍্সালের ঘরে তাঁকে নমস্কার করলাম এবং কাছের প্রজ্জ্বলিত আগুনটার কাছে হাত দুটা বেড়িয়ে দিলাম। ভাবছিলাম ইনি কন‍্সাল্ হলে কি হবে, মানুষ তো, আমিও মানুষ। কিন্তু শীঘ্রই বুঝলাম তাঁর চক্ষে আমি মানুষ নই, এমন কি কুকুর-বিড়ালও নই, গরু-গাধাও নই, আমি একটি বনমানুষ,—যাকে হত্যা করলে ফাঁসিতে চড়তে হয় না, শুকিয়ে মারলে কেউ কিছু বলবার অধিকার রাখে না, গুলি করে মারলে চার পয়সা দামী বুলেটের জন্যই লোকে আপশোষ করে। কন‍্সাল্ মহাশয় আমাকে বললেন, “আপনার টাকা এসেছিল, ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং এই প্রজ্জ্বলিত আগুনটি তাঁরই ব্যবহারের জন্য, গুড বাই, অর্থাৎ চলে যাও।” কি আর বলব। স্বাধীন দেশের মানুষতো নই, সেজন্য অবনতমস্তকে যখন কন‍্সলের ঘর হতে বের হয়ে আসছিলাম, তখন কয়েকজন পাঞ্জাবী মুসলমান, যারা কন‍্সালের