বাড়ি পাহারা দিচ্ছিল, তারা জিজ্ঞাসা করলে, কি হয়েছে, তোমাকে এত বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? নির্বাক হয়ে পথ চলছিলাম, ফেরবার পথে কোথাও চা খেলাম না। প্রচণ্ড শীতের অনুভূতি পর্যন্ত হচ্ছিল না। একদম শীত,গ্রীষ্মবোধহীন হয়ে শহরের দিকে, মাথা নত করে পলাতক পশুর মত, কোথাও আশ্রয় পাবার জন্য এগিয়ে চলছিলাম। কাকে কি বলব? দেশ নাই, জাত নাই, আমার মাঝে মনুষ্যত্ব নাই—এই ঘৃণিত জীবন নিয়ে বেঁচে থেকে কি লাভ? সকাতরে পথকে বলছিলাম, “আমাকে আশ্রয় দাও, তোমার বুকের ওপর সবাই হাঁটে তাই আমিও হাঁটছি। তোমার মাঝেই আমার লয় হোক, তুমি জাতবিচার কর না, বাদামী এবং সাদাতে তুমি পার্থক্য দেখাও না। স্বাধীনে পরাধীনে তোমার কাছে কোনও তারতম্য নাই, তুমি সকলের জন্য উন্মুক্ত। তোমার বুকের ওপর দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী মদগর্বে যেমন হাঁটছে, দরিদ্র পরাধীন জাতের লোকও তেমনি পদক্ষেপ করছে। তুমি পূঁজিবাদীরও নও, শাসক-জাতেরও নও। তুমি দাম্ভিক ভাড়াটে গুণ্ডারও নও, দীন মজুরেরও নও। তুমি সকলের। তুমি আমার একমাত্র ভরসা। তুমি ভরসা পরাধীনের, তুমি ভরসা নামগোত্রহীনের, তুমি আমার চরম আশ্রয়। তোমার ওপর দিয়ে চলতে চলতেই যেন আমার পরাধীন জীবনের শেষ হয়।”
এই ধরণের চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে শহরে এলাম এবং একটি বড় চায়ের দোকানে চা খেতে বসলাম। অনেকেই আমার মুখাকৃতি দেখে দুঃখিত হ’ল এবং কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করল আমার শরীর ভাল আছে কি না? সকলকেই এক কথায় জবাব দিলাম শরীর ভাল নাই। সেই সংগে মনে হয়েছিল আমানউল্লার কথা যিনি বুদ্ধি খাটিয়ে বৃটিশকে হটিয়ে দিয়ে নিজের দেশ স্বাধীন করেছিলেন।
রাজার রাজ্য কি করে চলে প্রজা সে সংবাদ রাখত না। কয়েক বছর আগেও বাংলা দেশের বৃটিশ রাজ্য কি করে চলত, তার সংবাদ বাংগালী সর্বসাধারণ ক'জন রাখত? জমিদার, তালুকদার, মিরাশাদার, খুদে জোতদার—